পশ্চিমবঙ্গের লেজ বাবা!

লেজের কারণে গোটা এলাকাজুড়ে বেশ সুখ্যাতি পেয়েছেন ৩৫ বছরের চন্দ্রা অরায়ন। দেহের পেছনে সাড়ে ১৪ ইঞ্চি লম্বা একখানা লেজ থাকায় তাকে এখন সাক্ষাৎ হনুমান মানছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। অধিকাংশ নিজ এলাকায় তিনি এখন লেজ বাবা নামেই বিশ্বে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রার তড়তড়িয়ে গাছে ওঠার গুণটিই যেন হনুমান হয়ে ওঠার এক বিরাট প্রমাণ!
প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে তার বাড়িতে এসে হাজির হয় নানা ভক্তকুল। তারা তার কোমরের নিচ অব্দি গড়িয়ে পড়া লেজখানি একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। তার আশীর্বাদে নিজেদের ধন্য মনে করে তারা। এ নিয়ে চন্দ্রাও খুব ভাব দেখায়। সে গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমিই হনুমান। এই লেজের কারণে লোকজন আমাকে বহু সম্মান করে। এ নিয়ে আমার কোনো অসুবিধা হয় না-এটা ঈশ্বরের দান।’ তার ভক্তদের বিশ্বাস চন্দ্রা রোগ সারানোর মতো বিরল ক্ষমতার অধিকারী। এজন্যই মাইলের পর মাইল সফর করে এই লেজবাবার কাছে ছুটে এসেছেন মনিকা লাকদা নামের এক ভক্ত। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইপোর একবার জ্বর হল। আমরা ডাক্তার দেখালাম, ওষুধও খাওয়ালাম। কিন্তু জ্বর আর সারে না। এবার আমরা ওকে চন্দ্রার কাছে নিয়ে এলাম। তার আশীর্বাদে কদিনেই ও ভালো হয়ে গেল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস সে হনুমানের প্রতিমূর্তি। লোকে বলে পবিত্র হনুমান দিবসে তার জন্ম হয়েছে। এজন্য আমরা ওকে বিশ্বাস করি।’ তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চন্দ্রার লম্বা লেজটি আসলে একটি জন্মগত ক্রটি। তারা এটি অপারেশন করে ফেলে দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এতে রাজি নয় চন্দ্রা। সে বলে, ‘ছোটবেলায় একবার আমার মা লেজ কেটি দিয়েছিল। এরপরই আমি ভীষণ জ্বরে পড়ি। প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম আর কি। তখন সবাই আমাকে লেজটি রেখে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
লেজের কারণে খ্যাতি পেলেও এটি নিয়ে কিন্তু কম হ্যাপা পেহাতে হয় না চন্দ্রাকে। ছোটবেলায় বাচ্চার তার ধরে টানাটানি করত। আসলে মজা করার জন্যই তারা এ কাজ করত। লেজের জন্য তার বিয়ে নিয়েও খুব সমস্যা হয়েছিল। কমপক্ষে ২০ জন পাত্রীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ২০০৭ সালে মাইনোকে (৩৮) বিয়ে করে চন্দ্রা। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়েও আছে, নাম রাধিকা। তবে চন্দার ঈশ্বর ইমেজ আর বানরের মতো তড়তড়িয়ে গাছে ওঠার কারিশমায় মন ভোলেনি মাইনোর। সে তাকে মোটেও পছন্দ করে না। তার স্পষ্ট কথা, ‘ও ভগবান হউক আর যাই হউক, আমার ওকে ভাল্লাগে না। আমি ওর সঙ্গে থাকতেও চাই না। ও দেখতে বিশ্রি। আমার বাবা-মা নেই। তাই ভাইয়ের কোনোরকমে একটা বিয়ে দিয়ে তাদের বোঝা নামাতে চেয়েছিল।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন