বোতলে ভেসে ১৬ বছর!

কখনো নেহাত পাগলামি হিসেবে আবার কখনো বা স্কুলের কাজ হিসেবে কত বিচিত্র কিংবা মজার কাজই না করতে হয় আমাদের। আর বহুদিন পরে ঘটনাচক্রে যখন সে সময়ের তৈরি করা কোনো সামগ্রী বা সে সময়ের কোনো লেখা আমাদের সামনে এসে হাজির হয়, তখন আমরা সবাই কমবেশি নস্টালজিক হয়ে পড়ি। যেমনটা সম্প্রতি ঘটেছে কানাডার অধিবাসী নিকোলাস মরিনের ক্ষেত্রে। প্রায় অভাবনীয় আর অবিশ্বাস্য শোনালেও আজ থেকে প্রায় ষোলো বছর আগে বোতলে ভরে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া মরিনের একটি বার্তাই সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে কয়েক শ মাইল দূরের ফ্রান্সের একটি সমুদ্র সৈকতে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্কুলের একটি প্রজেক্টের অংশ হিসেবেই ছেলেমানুষী এই বার্তাটি লিখেছিলেন নিকোলাস। শিক্ষকের পরামর্শে কানাডার জাতীয় পতাকাসহ একটি প্লাস্টিকের বোতলে ভরা সেই বার্তায় নিকোলাস লিখেছিলেন, 'হ্যালো, আমার নাম নিকোলাস মরিন। আমার বয়স এখন ১৬ বছর এবং আমার জন্ম হয়েছিল ১৯৮২ সালের ২৫ মে। আমি ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলি, তবে স্কুলে এখন আমি ইংরেজিও শিখছি। আমার একজন ভাই থাকলেও কোনো বোন নেই। আমার সবচেয়ে প্রিয় শখ হচ্ছে বাস্কেটবল খেলা এবং প্রিয় খাবার পিত্জা। আমি এখন কুইবেকের রক্সটন ফলে বাস করি এবং আশা করি শীঘ্রই তোমার কাছ থেকে বার্তা পাবো।' মজার বিষয় হলো, নেহাত স্কুলের কাজ হিসেবে মজা করে লেখা এই বার্তাটি পেয়ে কেউ যে কোনোদিন তার বার্তার জবাব দিতে পারে এটা সেই বয়সেও খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না নিকোলাসের কাছে। সময়ের পালা বদলে বেমালুম ভুলেও গিয়েছিলেন এই চিঠিটার কথা। তবে মন থেকে মুছে গেলেও প্রকৃতির খেয়ালে সেটা যে পৃথিবী থেকে মুছে যায়নি তারই বিস্ময়কর প্রমাণ নিকোলাস পান এই ২০১৪ তে এসে। হঠাত্ করেই ফ্রান্স থেকে লুসিয়েন স্যাঙ্কুয়ার নামের একজন তাকে ফোন করেন এবং দেশটির ক্রোজোন সৈকতে তার বোতলবন্দী বার্তাটি খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান। প্রথমটায় এটিকে অবিশ্বাস্য মনে হলেও লুসিয়েনের মুখে নিজের বার্তাটি হুবহু শুনে সেটিকে রসিকতা ভাবতে পারেননি। অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিকোলাসকে খুঁজে বের করা লুসিয়েন ইতোমধ্যে স্কাইপে কথা বলে দু'জনের দেখা করার সিদ্ধান্তও পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। তাই ১৬ বছর পর হলেও তার বার্তাটা একজন প্রাপকের কাছে পৌঁছানোর আনন্দতেই এখন বিভোর নিকোলাস। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন