টেক্সটাইল মেশিনারিজ প্রদর্শনী আজ

রাজধানীতে শুরু হচ্ছে ৪ দিনব্যাপী টেক্সটাইল মেশিনারিজের প্রদর্শনী ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি’। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বের ৩১টি দেশের ৮৫০টি মেশিনারি প্রস্তুতকারক কোম্পানি অংশ নেবে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। বেলা ১২টা থেকে ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গতকাল মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায়। দুপরে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিটিএমইএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন।
 এছাড়া সহযোগী আয়োজনক প্রতিষ্ঠন তাইওয়ানের চেনচাউ ইন্টারন্যাশনাল এবং হংকংয়ের ইয়র্কার ট্রেড এন্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানির কর্মকর্তারা ছাড়াও বিটিএমইএর অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলামীন এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, মূলত তিনটি সমস্যার কারণে বিগত বছরে টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের গতি কিছুটা কমেছে। এগুলো হলো-অবকাঠামোগত সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। গ্যাস বিদ্যুতসহ এসব সমস্যার সমাধান হলে টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ অনেকাংশেই বাড়বে। এছাড়া সরকারের নীতিগত সহায়তাও অব্যাহত থাকতে হবে বলে তিনি জানান। শ্রমিকদের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধিসহ ফ্যাক্টরীতে উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা, শ্রমিক-মালিক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে এখাতে গতি বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন। বিটিএমএ এ লক্ষ্যে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জাহাঙ্গীর জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রদর্শনীতে অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, চায়না, চেক রিপাবলিক ও ডেনমার্কসহ মোট ৩১টি দেশ অংশ নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের স্টলে প্রদর্শীত মেশিনারিজ বাংলাদেশী পোশাক রপ্তানীকারকদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।  তারা বলেন, এর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনকারী, প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীগণ সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নতমানের মেশিন, মালামাল, যন্ত্রপাতি এবং এর উৎসগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করাসহ মেলা প্রাঙ্গন থেকে মেশিনারী ক্রয় করতে পারবেন। এ ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশের সরবরাহ চেইন সম্পর্কে বিশেষত, স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং টেস্টিং, ওয়াশিং, এমব্রয়ডারী, সেলাই এবং সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ প্রযুক্তিগত ও উন্নতমানের  মেশিন, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির উৎসগুলো সম্পর্কে যথার্থ ধারনা ও পরিচিতি লাভ করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বিটিএমএ’র উদ্যোগে ২০০৪ সন থেকে ডিআইটি আয়োজন করা হচ্ছে। বস্ত্রখাতের সার্বিক প্রযুক্তিগত অবস্থান তুলে ধরা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে স্থানীয় মিলগুলোকে পরিচিত করা এবং বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ আকর্ষন করাই প্রদর্শনীটির মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও ২০০৩ সন থেকে প্রতি দু’বছর অন্তর টেক্সবাংলা শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে।  যার মূল উদ্দেশ্য প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরের অর্জিত সাফল্যের চিত্র সরকার ও নীতিনির্ধারকসহ জনসমক্ষে তুলে ধরা।
এসময় জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, বর্তমানে প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরের মিলগুলোর সুতা ও বস্ত্র সামগ্রীর প্রায় ৮০ শতাংশের উপর তৈরী পোশাক আকারে রপ্তানি হচ্ছে। এ খাতের মিলগুলো প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক ও আমদানি পরিপূরক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমাদের ফরেন রিজার্ভও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গ্লোবালাইজেশনের প্রেক্ষাপটে উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে টেক্সটাইল শিল্প কারখানা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন মেশিনারীজের কোন বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে পণ্যের গুনগতমান বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক রাখা সম্ভব হয়। তাই দায়বদ্ধতা থেকে বস্ত্রখাতে ক্রমাগতভাবে যে অত্যাধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে তার সাথে আমাদের সদস্য মিল ও বিনিয়োগকারীদেরকে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যেই আমরা প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছি। তিনি বলেন, আমাদের তথ্য অনুসারে বিনিয়োগ হিসাবে ২০১৩ সনে টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার উপর। তন্মধ্যে জানুয়ারী - জুন ২০১৩ সনে ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার মেশিনারী ও স্পেয়ার পার্টস আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৩ সনে মেশিনারী আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা অর্থাৎ জানুয়ারী-জুন ২০১৩ তুলনায় জুলাই- ডিসেম্বর ২০১৩ এ মেশিনারী আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫.৭২ শতাংশ হারে। এ সময়ে ৫টি নতুন স্পিনিং এবং ৬টি উইভিং মিল স্থাপনের জন্য মেশিনারী আমদানি হয়েছে । আগামী ১ বছরের মধ্যে এসব ফ্যাক্টরী উৎপাদনে যাবে বলে আমরা আশা করছি। সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন