শক্তিশালী হচ্ছে টাকা
বিদায়ী বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ২
টাকা। যেখানে ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল
৭৯ টাকা ৭৫ পয়সা, সেখানে ২০১৩ সাল শেষে ডলারের বিপরীতে টাকার মান
দাঁড়িয়েছে ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম কমেছে ২
টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। বিনিময় হার
স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মার্কিন ডলার
কিনেছে। আমদানি ব্যয় হ্রাস, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও
অনুদান বেশি আসায় বাজারে চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বেশি হয়ে গেছে। এ
কারণে স্থানীয় বাজারে ডলারের দর হারানোর প্রেক্ষাপটে দেশের রপ্তানি খাতকে
চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার থেকে ডলার কিনে। এছাড়া,
রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন বেড়েই চলছে। ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ
দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে
আসা রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়)-এর কোন ব্যবহার না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে
প্রচুর অলস ডলার পড়ে আছে। এ কারণে বাজারে ডলারের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডলারের
দাম কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে
বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। ২০১৩ সালের আগস্টে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির
ব্যাপক দরপতন ঘটে। এ সময় ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার ছিল ৬৪ দশমিক ১৩
রুপি। রুপির দরপতনের পেছনে প্রথমত তিনটি কারণ দায়ী বলে মনে করেন
বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ভারত থেকে উঠিয়ে নিচ্ছেন,
সার্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের মান
বাড়ছে। রুপির মানের পতনের ফলে বিশ্বের, বিশেষ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বড়
বড় পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধস নামে। জানা গেছে, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২২৮ কোটি ডলার
কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ২৬ কোটি, নভেম্বরে ৩৭ কোটি,
অক্টোবরে ৫৮ কোটি ৫ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩২ কোটি ৯ লাখ, আগস্টে ২২ কোটি ৬ লাখ
এবং জুলাই মাসে ৫১ কোটি ২ লাখ ডলার কেনে। আর ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সব চেয়ে
বেশি ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রয়কৃত এ ডলারের পরিমাণ ছিল ৪৫৩ কোটি। এ
প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সমপ্রতি কয়েকটি দেশে
ডলারের বিপরীতে মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
পদক্ষেপের কারণে কয়েক মাস থেকে ডলারের দাম ৭৭.৭৫ টাকা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব
হয়েছে। নগদ অর্থের পরিবর্তে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ডলার কেনা হচ্ছে বলে
জানান তিনি। তিনি বলেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ এখন ভাল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
হস্তক্ষেপ না থাকলে ডলারের দর ৭০ টাকার নিচে নেমে আসত বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ৬ জানুয়ারী ২০১৪
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন