৫ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ১০ গুণ

বিনিয়োগ খরা কাটিয়ে উঠছে সঞ্চয়পত্র। গেল দুই অর্থবছরে এই খাতে বিনিয়োগ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আশাব্যঞ্জক বিক্রি হয়েছে সঞ্চয়পত্র। গত জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে এই খাতে গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে ১০ গুণ। কেবল গত নভেম্বরে বিক্রি গত অর্থবছরের সমান।

জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বা নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।

গত অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো। বিক্রি কম হওয়ায় পরে সেই লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আর গত অর্থবছর জুড়ে বিক্রি হয়েছিল প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ শতাংশ। ওই সময়ে ৭৭৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর আগের অর্থাত্ ২০১১-১২ অর্থবছরেও নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্ট অনিশ্চয়তা আর ব্যাংকের সুদের হার তুলনামূলক কমে যাওয়ায় ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে এখনো স্থিতিশীলতা ফেরেনি। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো ঋণ কেলেঙ্কারি এবং তুলনামূলক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুদের হার বাড়েনি। এই পরিস্থিতিতে যাদের হাতে কিছু টাকা আছে তারা তুলনামূলক ঝুঁকিমুক্ত বিবেচনায় সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের ৮০ শতাংশই পরিবার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বরাবরই বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত চাকরি থেকে অবসরগ্রহণকারীসহ যাদের হাতে স্বল্প কিছু অর্থ রয়েছে তারাই পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে থাকে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালু রাখতে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমার সুযোগ তৈরি হবে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে সুদের হার কিছুটা বাড়িয়েছে সরকার। পরিবার, পেনশনার, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে তিন শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিন মাস অন্ত্মর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে। অবশ্য এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন শর্তের জালে ফেলে গ্রাহকের হাতে মুনাফা দেয়ার সময় ক্ষেত্রবিশেষে এই হার এক থেকে দুই শতাংশ কমে যায়।

গত ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করে। বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে এটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। বর্তমানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। যাদের কাছ থেকে মুনাফা দেয়ার সময়ই কর কেটে নেয়া হয়। এই টাকা পরবর্তীতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সমন্বয় বা ফেরত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এ সুযোগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিতে পারছেন না। কারণ তাদের অনেকেরই করযোগ্য আয় নেই। আবার অনেকের টিআইএন নেই। তবে এসব সত্ত্বেও এ খাতের বিক্রি বাড়ায় সরকারের জন্য তা কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ জানুয়ারী ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন