আওয়ামী লীগ এলে ঢাকা দিল্লি সম্পর্ক জটিল হবে

বাংলাদেশে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘অন্তত কম বল্গাহীন অবস্থান’ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিতে পারতো ভারত। কিন্তু সে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অধিকতর অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এবং যে ধরনের সমস্যাসঙ্কুল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসছে, তার সঙ্গে নয়া দিল্লির সম্পর্ক আরো বেশি জটিল হবে। গতকাল ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘আনসার্টেইনটি ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, আগামী ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে প্রধান দু’ বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার তত সামান্যই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজপথে বিরোধী দল বিএনপি’র বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে তীব্র সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। ১লা জানুয়ারি থেকে সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এতে রাজপথে সহিংসতা বাড়বে। এই মুখোমুখি অবস্থানের মূলে রয়েছে নির্বাচন। বিএনপি ও তার মিত্ররা এ নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের দাবি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতার শুরুর দিকে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। শুরুর দিকে যেসব পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেয় সরকার তার মধ্যে এটি একটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় (সর্বদলীয়) সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। এ দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি। অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর তাকে পুলিশ কমান্ডোরা নিয়ে যায় সামরিক হাসপাতালে। এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এর ফল হিসেবে, নির্বাচনে এখন অবশিষ্ট বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগই রয়েছে। গত বছরেই জামায়াতে ইসলামীকে (নির্বাচনে) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় তারা যে বৈধতা পেয়েছিল, এবার কোন মহল থেকেই তেমন বৈধতা পাবেন না।
এই সঙ্কট বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতীয় নীতিতে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এটা কোন গোপন কথা নয় যে, ঢাকার সঙ্গে নয়া দিল্লির সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা। ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির দৃষ্টিতে, অধিকন্তু জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে, এ দু’শের মধ্যে গত ৫ বছরে সম্পর্ক যেমন ছিল তার চেয়ে ভাল ছিল না কখনও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী কট্টরপন্থি ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিদ্রোহীদের নিরাপদ আস্তানায় দমনমূলক চালিয়েছেন। কিন্তু এই সমীকরণের একদিকে বাংলাদেশে অবিশ্বাস্যভাবে ভারতবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, ঢাকাকে ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে নয়া দিল্লি সমান ‘প্রতিদান’ দিতে পারেনি। যন্ত্রণার একটি বিষয় হলো তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে না পারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরিয়া হয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ভারত কমপক্ষে তাকে পরামর্শ দিতে পারতো এত মরিয়া হয়ে ব্যবস্থা না নিতে। কিন্তু সেই পরামর্শ দেয়ার জন্য এখন অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশ দৃশ্যত আরও ঘোলাটে পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্যাসঙ্কুল নতুন নির্বাচনে যে সরকার ক্ষমতায় আসছে তাদের সঙ্গে নয়া দিল্লির সম্পর্ক হবে অধিক জটিল।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২ জানুয়ারী ২০১৪

, ,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন