দেশে প্রথমবার রেমিটেন্সে ধস

অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের মতো বিদায়ী বছরে রেমিটেন্সেও ধস নেমেছে। প্রতিবছর ইতিবাচক থাকলেও এবারই প্রথম নেতিবাচক দৃশ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর আগের বছরগুলোতে পূর্বের বছরের চেয়ে রেমিটেন্স বেশি এসেছে। এতদিন সে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে সেটা ধরে রাখা যায়নি। তবে রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী হলেও বিদেশী মুদ্রার মজুত সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গেল বছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৩৭২ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের বছর ছিল ১৪২০ কোটি ডলার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘদিনের ইতিবাচক রেকর্ড ভেঙে গেছে। অন্তত অন্য সেক্টর ধ্বংস হলেও এতদিন প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকায় এ সূচকটি মাথা উঁচু করেছিল। কিন্তু আজ সে অর্জনটুকুও ম্লান। এরই মাধ্যমে অর্থনীতির অশনিসংকেত দিনে দিনে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করেন তিনি। বছরওয়ারী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালের তুলনায় গতবছর রেমিটেন্সের পরিমাণ কমলেও পুরো বছর জুড়ে রেমিটেন্স প্রবাহ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এর প্রভাবে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৩৪ কোটি ডলার। চাহিদার তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বেশি থাকায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছে ১০৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। পুরো বছরজুড়ে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৭১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার ধরলে বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ এক লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১৪২০ কোটি ডলার। জনশক্তি রপ্তানি চাঙ্গা না থাকলেও বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত অনাবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো এ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিটেন্স গ্রাহক হিসেবে বাংলাদেশকে পৃথিবীর শীর্ষ দশে ধরে রেখেছে। আর আঙ্কটাডের হিসাবমতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে রেমিটেন্স আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৭৪০ কোটি ১৭ লাখ ডলার। শতাংশ হিসাবে এ ছয় মাসে রেমিটেন্স কমেছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে এসেছে ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১২৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১২ সালের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল এক হাজার ২৭১ কোটি ডলার। ২০১৩ সালের শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৫ কোটি ডলার। এদিকে সমাপ্ত বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বছরের শেষে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার গড় দর দাঁড়ায় ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা। ২০১২ সালের শেষ দিনে এ দর ছিল ৭৯ টাকা ৯৩ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার না কিনলে টাকা আরও শক্তিশালী হতো। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দরপতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে। 
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ৫ জানুয়ারী ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন