নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আর্থিক খাতের জন্য উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে সংঘবদ্ধ করার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ সোমবার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এজন্য প্রয়োজনীয় ঋণ ও আর্থিক নীতির দিক দিয়ে সম্ভাব্য সব সমর্থন জোগানোর জন্য অঙ্গীকার করা হয়েছে। দেশিয় উত্পাদনশীল খাতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহের ধারা গতিশীল করার কথাও মুদ্রানীতির ঘোষণায় বলা হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া রফতানি খাতের জন্য যেসব সহায়তার কথাও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে ঋণ প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির চেয়ে তেমন কোন পরিবর্তন করা হয়নি।

মুদ্রানীতি উপস্থাপন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধের যে রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা দুরূহ হবে না। আর সামনের মাসগুলোয় নতুন কোনো বড় বিপর্যয় না হয় তাহলে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের আশেপাশেই থাকবে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে উত্পাদন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন যোগান সচল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োচিতভাবে বিভিন্ন নীতি সহায়তা ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে সাময়িক নমনীয়তা এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে উপকরণ আমদানির জন্য ঋণের খাত সম্প্রসারণ ও সুদহারে সাময়িক এক শতাংশ হরাস। এসব সহায়তা অনিশ্চয়তা ও উত্কণ্ঠার পরিস্থিতিতেও ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা মহলে আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিক খাদ্য মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগামিতার কারণে সামগ্রিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। আগামীতে কৃষি খাতে ঋণ যোগান বাড়ানোর মাধ্যমে তা কমবে বলে আশা করেন তিনি। নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে সাত শতাংশ। এছাড়া আন্তঃব্যাংক টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের পর্যাপ্ত তারল্য ও বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। এজন্য সঞ্চিতি অনুপাতগুলো (সিআরআর ও এসএলআর) অপরিবর্তিত রাখা থাকছে। এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক হিসেবেও উল্লেখ করেছেন গভর্নর।

মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। গভর্নরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমী, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও প্রধান অর্থনীতিবীদ ড. হাসান জামান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। নির্বাহী পরিচালক আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্য ডেপুটি গভর্নররাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

মুদ্রানীতির ঘোষণায় বলা হয়, স্বল্পমেয়াদি আমানতভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সামনের দিনগুলোতে দেশের বড় কর্পোরেট ও কংগ্লোমারেট গ্রুপগুলোকে অর্থায়ন যোগানের জন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে পুঁজিবাজারের ইক্যুয়িটি ও ডিবেঞ্চার ইস্যুর দিকে ঝুঁকানোর ঝুকানোর সুপারিশ করা হয়। প্রবাসে কর্মরতদের রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহের প্র্রবৃদ্ধিতে সাম্প্রতিক মন্দার দিকটি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্রে অর্থনীতির বহিঃখাত সামর্থের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার এর মূল কারণ। জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর জন্য সরকারি বিভাগগুলো বিশেষ নজর দেবে বলে আশার করা হয়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন