দেড় বছর পর লেনদেনের শীর্ষে ব্যাংক খাত

গত কয়েকদিন ধরে অন্য খাতগুলোর শেয়ারদর একদিন বাড়লে অন্যদিন কমেছে। তবে ব্যাংকিং খাতের প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল এ ধারা অব্যাহত ছিল। শেয়ারদরের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারার কারণে ব্যাংক খাত বিনিয়োগকারীদের কাছে এ মুহূর্তে বিনিয়োগের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন বৃদ্ধির পর প্রায় দেড় বছর পর গতকাল রোববার খাতওয়ারি শেয়ার লেনদেনে এ খাত শীর্ষে উঠে এসেছে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ব্যাংকিং খাতের ৩০ কোম্পানির ১২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশের বেশি। আর ২৭ ব্যাংক কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে মাত্র ২টির দর কমেছে, অপরিবর্তিত ছিল একটির। এর মধ্যে টানা দ্বিতীয় দিনে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে।
তবে ব্যাংকিং খাতের এ দরবৃদ্ধির নেপথ্যে সন্তোষজনক কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন ব্যাংকিং কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কম হয়েছে। এতে ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ নীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা ছাড় প্রদান করায় হয়তো বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন।
গতকাল এ বাজারে লেনদেন হওয়া ২৯৪ কোম্পানির মধ্যে ১৬১টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির দর। এতে ডিএসই-এক্স সূচক পৌনে ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪৭৫৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। দিনব্যাপী লেনদেন হয়েছে ৮৫৯ কোটি ১ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ২৩৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১২৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬টির দর। নির্বাচিত খাত মূল্যসূচক ১২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৯৩৫৯ পয়েন্টে উঠেছে। লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার।
ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাত ছাড়া এদিন বীমা খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। আর একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড খাত। গতকাল তিন কোম্পানি শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে। অন্যদিকে ওই দরে কেনাবেচা হয় ৪ মিউচুয়াল ফান্ড। মাঝারি খাতগুলোতে ছিল মিশ্রাবস্থা। বিপরীতে ক্ষুদ্র খাতগুলোর বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
খাতওয়ারি লেনদেনে ব্যাংকিং খাতের পর জ্বালানি ও শক্তি খাতের ১৫ কোম্পানির ১১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। এর পরের অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাতের ২৬ কোম্পানির ১০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার, ঔষধ ও রসায়ন খাতের ২৩ কোম্পানির প্রায় ৯৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন।
একক কোম্পানি হিসেবে গতকাল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সর্বাধিক ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে ছিল অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, পদ্মা অয়েল, ওরিয়ন ফার্মা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল রূপালী ব্যাংক, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, সায়হাম টেক্সটাইল, অষ্টম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল ব্যাংক। এসব শেয়ার ও ফান্ডের সাড়ে ৮ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারদর বেড়েছে। বিপরীতে রেকিট বেনকিজার, শমরিতা হাসপাতাল, ন্যাশনাল টিউবস, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার ছিল দরহ্রাসের শীর্ষে। কোম্পানিগুলোর ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ দরপতন হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২৭ জানুয়ারি ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন