কর আদায়ে মরিয়া এনবিআর


আয়কর আদায়ে মরিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করযোগ্য আয় থাকার পরও ফাঁকির আশ্রয় নিয়ে কর দিচ্ছে না এমন লক্ষাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৬ মাসে এমন ১ লাখ ২২ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এ খাত থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব পাওয়ার আশা করছে সংস্থাটি।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ওই সব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও সরকারের কোষাগারে কোনো ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করে না। ঢাকার কর অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি কর ফাঁকির ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা অঞ্চলে ৫২ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য খুলনার ২৬ হাজার, চট্টগ্রামের ১৬ হাজার, সিলেটের ৫ হাজার, নারায়ণগঞ্জের ৩ হাজার ৫০০, রাজশাহীর ২ হাজার, রংপুরের ২ হাজার, ময়মনসিংহের ১ হাজার ৫০০, গাজীপুরের ১ হাজার ৫০০ ও বরিশালের ১ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।
এদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর। বিশেষ করে বড় অঙ্কের কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কর বিভাগের সদস্য মো. আলাউদ্দিন বলেন, কর ফাঁকিবাজদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় বড় অঙ্কের কর ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর আদায়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফাইল খোলা হচ্ছে। তবে কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কর ফাঁকিবাজ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের আয়কর বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর সরকারের রাজস্ব পাওনা না দিলে মামলাসহ ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কর আদায় করা হবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কর আদায়ের জন্য ৫০ হাজার নথি খোলা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো আয়কর দিতে হয় না। পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্য মূল আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেয়া বাধ্যতামূলক। এর পরের ৪ লাখ টাকার ওপর দিতে হয় ১৫ শতাংশ। পরের ৩ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ কর দিতে হয়। আর অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
এছাড়া এনবিআর দেশের কয়েক লাখ বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিককে চিহ্নিত করেছেন। তাদেরও কর জালের আওতায় আনা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় চিঠি দেয়ার কাজ চলছে। এরপর স্থানীয় কর কার্যালয় রাজস্ব সংগ্রহের সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাব জব্দ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন জানান, যথাযথভাবে কর দেন না এমন প্রায় দেড় লাখ বাড়িওয়ালা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে বাড়িওয়ালা রয়েছে ৭৩ হাজার। এদের মধ্যে ঢাকায় ৬০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য জেলায় ২০ শতাংশ বাড়িওয়ালা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদিকে, আয়কর আইন ১৯৮৪ এর ৯৩ ধারার আওতায় এসব বাড়ির মালিকদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। কিন্তু দেশের চলমান অস্থিতিশীলতায় বেশ শঙ্কায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এনবিআর সারাদেশে এ ধরনের বাড়তি পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
সূত্র: দৈনিক যায় যায় দিন, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন