আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, প্রিমিয়ার ব্যাংককে লাখ টাকা জরিমানা

সংরক্ষিত সঞ্চিতি (প্রভিশন) ব্যবহার না করে কেবল চলতি বছরের আয়ের খাত থেকে অর্থ কর্তন করে ঋণ অবলোপন করেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। এ ছাড়া আংশিকভাবে ঋণ অবলোপনের কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। তা ছাড়া হিসাবায়িত অবলোপিত ঋণের সঙ্গে আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত পরিমাণের অমিল পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের দায়ে সম্প্রতি ব্যাংকটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই জরিমানার অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে জমা দিতে বলা হয়েছে ব্যাংকটিকে। সম্প্রতি প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রস্তুতকৃত ডিসেম্বর ২০১২ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদনটি নিরীক্ষা করেছে মেসার্স হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। কিন্তু এই অনিয়মের বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রশ্ন তোলেনি। এসব অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়ায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি একটি মুচলেকা স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি পঞ্জিকা বছর শেষে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করিয়ে তা পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়। এ বছর প্রিমিয়ার ব্যাংকের জমা দেওয়া আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে নিয়মিত দেওয়া তথ্যের অমিল পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রিমিয়ার ব্যাংক তাদের মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে এ অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে, মুনাফা বেশি দেখাতে পারলে শেয়ারপ্রতি আয় বেশি হয়। এতে শেয়ার গ্রহীতাদের ওই ব্যাংকে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি (বিআরপিডি) বিভাগের টাস্কফোর্স শাখা থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বেশ কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করে। এর ভিত্তিতে গত ২৭ নভেম্বর ব্যাংকটিকে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে সম্প্রতি তাদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।' গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক জরিমানার টাকা জমা দেয়নি বলেও জানান মাহফুজুর রহমান।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত সঞ্চিতির (প্রভিশন) ১০০ শতাংশ স্থিতি ঋণ অবলোপনের জন্য পর্যাপ্ত না হলে চলতি বছরের আয়ের খাত বিকলন করে ঋণ অবলোপন করা যাবে। কিন্তু প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রভিশন ব্যবহার না করে কেবল চলতি বছরের আয়ের খাত বিকলন করে ঋণ অবলোপন করেছে। এ ছাড়া আংশিক অবলোপনের আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকলেও ব্যাংকটি ২০১২ সালে ৭০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ আংশিক অবলোপন করেছে।

ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের বাধ্যতামূলক হলেও ৪৮টি ক্ষেত্রে মামলা না করে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিয়ে মামলা দায়ের ছাড়াও ঋণ অবলোপনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এর কোনো প্রয়োজন মনে করেনি ব্যাংকটি।

তা ছাড়া বিআরপিডির করা শ্রেণীকৃত ঋণ বিবরণীর সঙ্গে দাখিলকৃত ঋণ অবলোপনের বিবরণীতে প্রদর্শিত পরিমাণের সঙ্গে নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের তথ্যের মিল পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংকটির ডিসেম্বর ২০১২ ভিত্তিক শ্রেণীকৃত ঋণ বিবরণীর সঙ্গে দাখিলকৃত ঋণ অবলোপনের বিবরণীতে অবলোপিত ঋণের পরিমাণ ১০১ কোটি টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ১৮৭ কোটি ৭১ লাখ দেখানো হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন