সোনালী ব্যাংকের দোষী কর্তাদের শাস্তির সুপারিশ

সোনালী ব্যাংকের অধঃপতন ঠেকাতে স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়ায় সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা এবং লাইন ম্যানেজমেন্টের কঠোর নজরদারি প্রায় ধসে পড়া ব্যাংকটিকে সুরক্ষা দিতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকের ১২টি শাখা সরাসরি পরিদর্শন ও বাকি এক হাজার ১৮৮ শাখার আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনা করে এমন পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিদর্শন প্রতিবেদনটি ৩০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকের জন্য ১৬টি পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিধি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের কার্যকর কোনো ঋণ নীতি, তারল্য ব্যবস্থাপনা নীতি, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিপালন নীতি, কৌশল পরিকল্পনাসহ অন্যান্য কোনো নীতিই প্রণয়ন করা হয়নি। আর ব্যাংকে যেসব নীতি বিদ্যমান, তার বাস্তবায়ন পরিস্থিতিও অত্যন্ত নাজুক। এসব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ভূমিকা সন্তোষজনক মনে হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম তদারকি ও তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যবস্থাপকদের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। উপরন্তু ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম তদারকি ও তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও নিরীক্ষা কমিটির ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়।

ব্যাংকে কোনো স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিপালন বিভাগ নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও কমপ্লায়েন্স ইউনিট নামে তিনটি ইউনিট থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সোনালী ব্যাংকে এ তিনটি ইউনিট থাকলেও তার কার্যক্রম তদারকি করা হয় তিনটি বিভাগের মাধ্যমে। অডিট ইউনিটের কার্যক্রম ভিজিলেন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল ডিভিশনের মাধ্যমে তদারকি হয়। এ বিভাগ তিনটির কার্যক্রম আবার তদারকি করেন আলাদা তিনজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম)। এ তিনটি ইউনিটের জবাবদিহিতা পৃথক তিনটি বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকায় তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব প্রবল। এ বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বছরখানেক আগে নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি সোনালী ব্যাংক। আর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও সময়মতো যথাযথ রিপোর্টিংয়ের অভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও নিরীক্ষা কমিটির কাছে ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতেও ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ঋণ বিতরণের আগে ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার খাতিরে ঋণগ্রহীতা নির্বাচন, ঋণ খাতের সম্ভাব্যতা যাচাই, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও নথিপত্র সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হয় না। আবার কখনো কখনো কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এমন কিছু ঋণ বিতরণ করা হয়, যা ব্যাংককে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি করে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৬টি সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন দলের উদ্ঘাটিত গুরুতর আর্থিক অনিয়মগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর সঙ্গে লাইন ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রম তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে সক্রিয় করতে হবে।

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিপালন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা, নীতির বিচ্যুতিসহ বিভিন্ন উপায়ে সংঘটিত অনিয়মের তথ্য নিরীক্ষা দল যথাযথভাবে উদ্ঘাটন করে পরিচালনা পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করবে। এ জন্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থাকে স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। সেসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন