মেশিনে যাচাই ছাড়া বড় নোট লেনদেন না করার নির্দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির পরও বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে জাল নোট পাওয়া যাচ্ছে। এটিএম বুথেও এ ধরনের নোট মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এতে হয়রানিতে পড়ছেন গ্রাহক। ব্যাংকগুলো জাল নোট শনাক্তকারী নিম্নমানের যন্ত্র ব্যবহার করছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে জাল নোট উন্নতমানের মেশিনে পরীক্ষা ছাড়া ১শ', ৫শ' ও ১ হাজার টাকার নোট লেনদেন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এটিএম বুথে টাকা সরবরাহের আগে ছেঁড়া-ফাটা ও জাল নোট আলাদা করতে সক্ষম মেশিনে বাধ্যতামূলকভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সম্প্রতি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছে।চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিশেষ করে এটিএম বুথে জাল নোট প্রাপ্তির বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি রোধ করতে জরুরি ভিত্তিতে সব শাখায় উচ্চ মূল্যমানের নোট বিশেষ করে ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট জমা ও প্রদানের সময় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন দ্বারা পরীক্ষা করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এটিএম বুথে নোট সরবরাহের আগে ছেঁড়াফাটা ও জাল নোট আলাদা করতে সক্ষম উন্নতমানের নোট প্রসেসিং মেশিন দ্বারা নোট যাচাই-বাছাই করতে হবে।সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে জাল নোটের প্রচলন রোধে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন কোনো না কোনো ব্যাংকের ভল্টে গিয়ে জাল নোট আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ২৭টি ব্যাংকের ২৩ লাখ পিস নোট পরীক্ষা করে ৬টি নোট জাল পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর সব ব্যাংকের ভল্ট পরীক্ষা করে প্রতি ১০ লাখে ৩টি নোট জাল পাওয়া যায়। ব্যাংকাররা জানান, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক থেকে ব্যাংকের কাছে টাকা জমা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেশিনের দুর্বলতা বা ব্যাংকারের অসতর্কতার কারণে এ ধরনের দু'একটি নোট ঢুকে পড়ে। তবে অসাধু ব্যাংকার বড় অংকের পরিশোধের সঙ্গে দু'একটি জাল নোট ঢুকিয়ে দিচ্ছে কি-না তাও তদারক করা হচ্ছে। বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকবেশে গিয়ে তাদের লেনদেন পদ্ধতি তদারক করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।জানা গেছে, গত নভেম্বরে বেসরকারি একটি ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তোলেন রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এর মধ্যে প্রতিটি ১ হাজার টাকা মূল্যমানের এক লাখ টাকার বান্ডেল নিয়ে তিনি ব্যবসায়িক দেনা মেটান। যাকে টাকা দিয়েছেন তিনি এখান থেকে একটি নোট জাল হিসেবে শনাক্ত করেন। বিব্রত রফিকুল সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি বললে তারা ওই নোট দেননি বলে জানিয়ে দেন। উল্টো রফিকুল বাইরে থেকে জাল নোট এনে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে ধমক দেন। বান্ডেল খুলে ফেলায় এ নিয়ে তিনি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ ধরনের অনেক অভিযোগ আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তবে ব্যাংকিং নিয়মে কোনো নোটের বিষয়ে আপত্তি থাকলে কাউন্টার ত্যাগের আগেই জানাতে হবে। তাই শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগ বিষয়ে কিছুই করার থাকে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) সাইফুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তার অসতর্কতায় দু'একটি জাল নোট ঢুকে পড়ে। জাল নোট বিষয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংকের ভল্টে তদারক চলছে। তবে এখন আর এ ধরনের নোট পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন