মিশ্র প্রবণতার পুঁজিবাজারে লেনদেনে উন্নতি

সূচকের মিশ্র প্রবণতার মধ্যেও পুঁজিবাজারগুলোর লেনদেনে বড় ধরনের উন্নতি ঘটে চলেছে। গত রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৫২৬ কোটি টাকায় পৌঁছলেও গতকাল তা আরো বেড়ে ৬৪৭ কোটি টাকায় পৌঁছে। সে হিসেবে এক দিনের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারটিতে লেনদেন বেড়েছে ১২১ কোটি টাকা। গত ২৬ নভেম্বরের পর আর এ পর্যায়ে উঠেনি ডিএসই’র লেনদেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনেও যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। রোববারের ৬৭ কোটি টাকা থেকে গতকাল ৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয় সিএসই’র লেনদেন। তবে দিনের শুরুতে দুই বাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও দিন শেষে তা ধরে রাখতে পারেনি বাজারগুলো। লেনদেনের বেশির ভাগ সময় মিশ্র প্রবণতায় পার করলেও দিন শেষে উভয় বাজারই সূচকের সামান্য অবনতিতে লেনদেন শেষ করে। ঢাকায় ডিএসইএক্স সূচকটি ১২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ডিএসই-৩০ সূচক কমে ৫ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। চট্টগ্রামে সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৯৭ ও ২১ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট।
এ দিকে বাজারের নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যেও দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধি থেমে নেই। বরং তা আবারো অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। গতকাল এ ধরনের বেশ কয়েকটি কোম্পানি আবারো উঠে আসে ডিএসই’র মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশে। এদের মধ্যে কোনো কোনোটি গতকাল দুই বাজারের সার্কিট ব্রেকারের শীর্ষ দরে লেনদেন হতে দেখা যায়। এর আগে ডিএসই’র তদন্ত দল সরেজমিন কিছু কিছু কোম্পানি পরিদর্শন করলেও দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিগুলো বন্ধ পায়। এ ধরনের কোম্পানির একটি ছিল রহিমা ফুড। কিন্তু এরপরও স্থগিতাদেশ থাকা এ ধরনের একটি কোম্পানির লেনদেনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু স্থগিতাদের প্রত্যাহারের পর দিন থেকে আবারো শুরু হয় মূল্যবৃদ্ধির বাড়াবাড়ি। গতকাল ডিএসই’র মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে বেচাকেনা হয় শেয়ার। এমনকি বিক্রেতা না থাকায় কিছু সময় লেনদেন বন্ধ থাকে। গতকাল ডিএসই’র মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশে আরো জায়গা করে নেয় হাক্বানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং, লিগেসী ফুটওয়্যার, ফাইন ফুড ও বিচ হ্যাচারির মতো কোম্পানিগুলো। বরাবরই বাজারের নেতিবাচক প্রবণতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা পরিকল্পিতভাবে এসব শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ ধরনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দেয়। ডিএসই’র তদন্ত কমিটির এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় ডিএসই’র ওয়েবসাইটে। এর আগে দিনের পর দিন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হলেও এখন এ নিয়ে ডিএসই’র সিদ্ধান্তহীনতাকে স্বভাবিকভাবে নিচ্ছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এসব শেয়ারের পেছনে যারা রয়েছে তারা খুবই শক্তিশালী। তা না হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সতর্কবাণীও অগ্রাহ্য হতো না। তা ছাড়া ডিএসই’র নীতি নির্ধারকদের অনেকে এসব শেয়ারের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে বাজারে।
রোববারের ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় শুরু হয় দুই পুঁজিবাজারের লেনদেন। আধঘণ্টার লেনদেনে ৪৫ পয়েন্ট বাড়ে ডিএসই সূচক। ৪ হাজার ৩০২ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে সকাল ১১টায় ডিএসই’র প্রধান সূচকটি পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। লেনদেনের এ পর্যায়ে বিক্রয় চাপের শিকার হলে এখান থেকেই নি¤œমুখী হয় সূচকটি। দিনের লেনদেনের বাকি সময় সূচকের কিছুটা ওঠানামা থাকলেও নেতিবাচক প্রবণতা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি বাজার। দিন শেষে সূচকের ১২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট হারিয়ে লেনদেন শেষ করে ডিএসই।
গতকাল দুই বাজারের লেনদেন হওয়া সবগুলো খাতেই ছিল মিশ্র প্রবণতা। এর মধ্যেও কিছুটা ভালো কাটে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রসায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের। ব্যাংক, বীমা, সিমেন্ট, প্রকৌশল ও টেক্সটাইল খাতে দরপতনের হার ছিল কিছুটা বেশি। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ২৯১টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১৩২টির দাম বাড়লেও কমেছে ১৩০টির। ২৯টির দর ছিল অপরিবর্তিত। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামে ২১৮টি লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ৯১টির দাম বাড়ে ৯৮টির কমে এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।
লেনদেনে গতকালও ডিএসই’র শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন্স। ৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় ৯৩ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয় কোম্পানিটির। ২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা লেনদেন করে ডেল্টা লাইফ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসই’র শীর্ষ দশ লেনদেনকারী কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল গোল্ডেন হারভেস্ট, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, আর এন স্পিনিং, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকস, গোল্ডেন সন, আরগন ডেনিমস ও ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস।
সূত্র: দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন