প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
স্বাক্ষর জাল করে গ্রাহকের প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা
হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে
অভিযোগ তারা হলেন- ব্যাংকটির পরিচালক বজলুল হক হারুন এবং বংশাল শাখা
ব্যবস্থাপক সামসুদ্দিন চৌধুরী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার খলিলুর রহমান এ
অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল
ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস একটি প্রাথমিক তদন্ত চালিয়েছে। এতে
অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১
(ডিবিআই-১)-এ বর্তমানে এটি চূড়ান্ত তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া, একই অভিযোগ
দুদকের কাছেও জমা পড়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, খলিলুর রহমান নামের একজন
গ্রাহকের একাউন্ট থেকে স্বাক্ষর জাল করে চার মাসেই ৩৮৮টি চেকের মাধ্যমে এ
টাকা আত্মসাৎ করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তাদ্বয়। পরস্পর যোগসাজশে তারা এ
দুর্নীতি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এমন অভিযোগ আসলে তা আমলে নিয়ে
অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। এ অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন দুদকের
উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয়
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। এরই মধ্যে শাখার ক’জন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য আরও ক’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে
বলে জানানো হয়। খলিলুর রহমানের (গ্রাহক) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
২০০৮ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে স্বাক্ষর জাল করে এ বিপুল
পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। প্রিমিয়ার ব্যাংকের বংশাল শাখা থেকে টাকা
উত্তোলনের জন্য চেক বইয়ের আবেদন করা হলে জালিয়াতির ঘটনা সামনে চলে আসে।
ব্যালান্স না থাকায় হিসাবটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান শাখা ব্যবস্থাপক
সামসুদ্দিন চৌধুরী। খলিলুর রহমান নিজে তার হিসাব থেকে সব টাকা তুলে
নিয়েছেন বলেও শাখা থেকে জানানো হয়। ওই সময় খলিলুর রহমান চ্যালেঞ্জ করে
হিসাবের লেনদেন-সংক্রান্ত স্টেটমেন্ট চান। তিনি বলেন, আত্মসাতের ঘটনা জানতে
পেরে ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে এ টাকা উত্তোলনের জন্য ডকুমেন্ট চাইলে তিনি
নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। ব্যাংক এস্টেটমেন্টের কপি ও চেকের ফটোকপি
চাওয়ার পরও দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে তিনি অন্য শাখার এক
কর্মকর্তার সহায়তায় অনলাইনের মাধ্যমে বংশাল শাখায় তার হিসাবের স্টেটমেন্ট
সংগ্রহ করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে সামসুদ্দিন হায়দার চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগ
সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাছাড়া, খলিলুর রহমানকে একাধিকবার
ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। দুদকে আসা অভিযোগে দেখা যায়,
রুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক খলিলুর রহমান। তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের বংশাল
শাখায় নিজের নামে হিসাব খোলেন ২০০৮ সালের ২রা জুলাই। হিসাব নম্বর
০১১৯১৩১০০০০০৮৭৯। খলিলুর ঠিকাদারি ব্যবসা করে প্রাপ্ত বিলের টাকা ৭টি চেকে
বংশাল শাখায় মোট ২০৩ কোটি ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ টাকা জমা করেন। ব্যাংকের
পরিচালক বজলুল হক হারুন প্রভাব খাটিয়ে ওই গ্রাহকের নামে চেকবই উঠিয়ে
গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে ৩০০টি চেকে ১৩৩ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৭ টাকা
উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ওই পরিমাণ অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাতে শাখা
ব্যবস্থাপক সামসুদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশ
ছিল। এব্যাপারে জানতে চাইলে বজলুল হক হারুন মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি
বানোয়াট ও অসত্য। ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন
বিভাগ অভিযোগটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাল চেকে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা
উত্তোলনের তথ্য ও নথি পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত প্রতিবেদন
কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়েছে। তদন্তে গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে অর্থ
আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-পরিচালক শামসুর রহমানের
নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অপর দু’জন সদস্য হলেন যুগ্ম পরিচালক
আবুল বশার ও উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান আকন।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন