এরশাদকে হাসপাতালে রেখে এমপি হতে ব্যস্ত জাপা নেতারা



সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার নামেআটকজাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের কোনো খোঁজই নিচ্ছেন না তার দলের শীর্ষ নেতারা বিশেষ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যারা ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে গেছেন এবং যারা এখনো নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন, তারা কৌশলে এরশাদকে এড়িয়ে চলছেন
এদিকে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদকে দেখতে কয়েকবার গেছেন দলের মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার জিএম কাদের। এছাড়া এরশাদের স্ত্রী রওশন এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা . গওহর রিজভীও তাকে দেখতে যান। দলের আর কোনো নেতা সেখানে যাননি। তাদের অনেকেই এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে, যদিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু মাত্র তিনজন ছাড়া দলের কোনো নেতাই তার কথা শোনেননি।
আটকের পর এরশাদকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন কিনাÑ জানতে চাওয়া হলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যায়যায়দিনকে জানান, তিনি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, তাই দেখতে যেতে পারেননি। তবে দলের নেতাদের মাধ্যমে স্যারের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এছাড়া এরশাদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে, তা পালন করা হবে। তিনি ঢাকা- আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী জানুয়ারি তিনি বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনবেন বলেও এই প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর এরশাদের নেতৃত্বে তার দল সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই সময় জাতীয় পার্টি ২৯৯টি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ারও নির্দেশ দেন এরশাদ। তার নির্দেশে তখন দলের মোট ২৪৮ জন প্রার্থী নিজ নিজ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সময় স্বল্পতার কথা বলে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি। কিন্তু এরই মধ্যে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অজুহাত তুলে হঠাৎ বেঁকে বসেন এরশাদ। চলতি মাসের তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। তার এই ঘোষণায় অনেকটা বেকায়দায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে তার অনুমতি ছাড়া দলের কোনো প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দ না দেয়ার জন্য চলতি মাসের ১২ তারিখে তিনি নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি চিঠি দেন। আর ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে এরশাদকে তার রাজধানীর প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবন থেকে নাটকীয় কায়দায় তুলে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে ্যাবের সদস্যরা। ঘটনার পর এরশাদের বাড়িতে উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মী গণমাধ্যমে ফোন করে জানিয়ে দেন, এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে, রুহুল আমীন হাওলাদার রাতে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এরশাদকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পরদিন জাপার বেশিরভাগ নেতার বক্তব্য ছিল, এরশাদকে সরকার আটকে রেখেছে। সময় রুহুল আমীন হাওলাদারের ভূমিকায় তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এদিকে, আটকের দিন পর ১৬ ডিসেম্বর এরশাদকে জোরপূর্বক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে দাবি করে তার মুক্তির দাবিতে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন দলের মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু পরদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য জাপার কোনো নেতাকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। এমনকি পরদিন এরশাদের মুক্তি দাবিতে স্মারকলিপি পর্যন্ত দিতে যাননি কোনো নেতা। এখনো পর্যন্ত তার মুক্তির দাবিতে আর কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।আমি অসুস্থ নই, আমাকে আটকে রাখা হয়েছে’Ñ এরশাদের মুখ থেকে রকম বক্তব্য এলেও ব্যাপারে নেয়া হয়নি কোনো আইনগত ব্যবস্থা। রোগ ছাড়া একজন মানুষকে হাসপাতালে আটকে রাখা যায় কিনা, ব্যাপারেও দলের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। একইভাবে দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা এরশাদকে আটকে রাখা হয়েছে বলে প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন তার মুক্তির দাবিতে কোনো ধরনের কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, এরশাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে তার নির্দেশ উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার ২১ জন এমপি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তাদের অধিকাংশই দলের শীর্ষ নেতা। জাপার আরো ৮৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬১টি আসনে আওয়ামী লীগের তেমন কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। বলতে গেলে এসব প্রার্থীও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার পথে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যায়যায়দিনকে জানান, যেসব নেতা গত ২২ বছরে এমপি হতে পারেননি, এই সুযোগে তারা এক দিনের জন্য হলেও সংসদ সদস্যের খাতায় নাম লেখাতে অস্থির। তাই যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে গেছেন, তারা অপেক্ষা করছেন, কবে তাদের শপথ হবে। আর যারা এখনো নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন, তারা চাইছেন এই সুযোগে যে কোনো মূল্যে একবার এমপি হতে। তাই দলের চেয়ারম্যানকে নিয়ে তাদের ভাবার সময় নেই।
তবে জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এরশাদ একদিকে দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিরা তদের পদ হারাতে চাইছেন না।
ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ- আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়া জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা যায়যায়দিনকে জানান, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন তিনি মোটামুটি অবসর আছেন।
কিন্তু হাসপাতালে আটক দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে দেখতে যাননি স্বীকার করে তিনি জানান, নিয়ে দলের আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই এবং সামনে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে কিনা, তাও তিনি জানেন না।
একই অবস্থা এরশাদের কাছের অস্ত্র হিসেবে খ্যাত জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ক্ষেত্রেও। তিনি ঢাকা- আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জানিয়ে বলেন, ‘ভাই, নির্বাচনের বাইরে দলীয় কোনো বিষয়ে এখন কথা বলার সময় নেই।পরে কথা হবে বলে তিনি মোবাইল ফোন রেখে দেন।
ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার জানান, তিনি নিজে সকাল-সন্ধ্যা দুইবেলা প্রতিদিন দলের চেয়ারম্যানের খোঁজ-খবর নিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তার ছোট ভাই জিএম কাদেরও নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন।
এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আবার তার নির্দেশেই অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একইভাবে অনেকের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।
অফিস করেছেন আনিস
এদিকে, জাতীয় পার্টি নেতা পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সোমবার আবারো সচিবালয়ে অফিস করেছেন।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নিজ দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ের খোঁজ-খবর নেন। সময় তিনি বিভিন্ন ফাইলপত্রেও স্বাক্ষর করেন।
মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্যার বেলা সোয়া ১১টায় অফিসে এসেছিলেন। দুপুর একটার কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। মঙ্গলবার অফিস করবেন কিনা, ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।
পানিসম্পদমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা অজিত চৌধুরী যায়যায়দিনকে জানান, অনেকদিন পর অফিসে এসে মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সময় তিনি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কর্মকা-ের খোঁজ-খবর নেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফাইলে স্বাক্ষরও করেন। দুই ঘণ্টা নিজ কক্ষে অবস্থান করে তিনি বেরিয়ে যান।
সূত্র: দৈনিক যায় যায় দিন, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ 

, ,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন