কাঁচামাল সংকটে সিরামিকের উৎপাদন ব্যাহত

চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। হরতাল-অবরোধে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় পণ্য সরবরাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের সম্ভাবনাময় রফতানিমুখী শিল্প সিরামিক খাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। টানা হরতাল ও অবরোধে রফতানি কমছে প্রতিদিন।
 
এতে চলতি অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মুখ থুবড়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা অবরোধের ফলে চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল কারখানায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে রফতানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য রফতানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছানোও সম্ভব হচ্ছে না। আবার সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপও পাওয়া যাচ্ছে না।
 
হরতাল-অবরোধে শোরুম ও বিক্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ। কারখানার ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করা সম্ভব না হওয়ায় বেতনভুক্ত শ্রমিকদের কাজ ছাড়া বেতন গুনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। এসব মিলে শিগগির রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে এ খাতের কারখানাগুলো বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
 
অথচ দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে এ খাতটি দেশের চাহিদা পূরণ করে অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর) প্রথম চার মাসে ১ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
 
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর আগের অর্থবছরে এ খাত থেকে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল।
 
এবার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির টার্গেট করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
জানতে চাইলে এ খাতের অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারক ফার সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান উদ্দীন সমকালকে জানান, বিগত প্রায় এক মাস ধরে বিদেশে পণ্য রফতানি একদম বন্ধ রয়েছে। হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। এতে রফতানি আদেশ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
 
ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে চলমান সহিংসতায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় এ খাতটি। তাদের দাবি, শতভাগ কাঁচামালনির্ভর এ খাতে গত এক মাস ধরে কারখানার ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তারা বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় কাঁচামালের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেশিরভাগ ফ্যাক্টরিতে এখন উৎপাদন কমে গেছে।
 
নভেম্বর মাসে হরতাল-অবরোধ হয় ১৬ দিন। তার সঙ্গে সরকারি ছুটি মিলে মাসজুড়েই কারখানা বন্ধ ছিল। তাই গত মাসে তেমন কোনো উৎপাদন হয়নি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ অবস্থায় বিরোধী দলের ডাকা আবারও টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিরামিক অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও মুন্নু সিরামিক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম সমকালকে জানান, এ খাতের পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার উপায় খুঁজছি। কারণ কারখানায় কাঁচামালের জোগানের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
 
আবার যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে তাও বিক্রি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শ্রমিকদের গত মাসের বেতন কোনো রকমে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের বেতন কীভাবে পরিশোধ করব তা নিয়ে চিন্তিত।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন