৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ!

৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ!শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্গ্নোবাল হেভি কেমিক্যাল কোম্পানির উদ্যোক্তারা প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি থেকে অন্তত ৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কোম্পানির উদ্যোক্তারা প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ২ কোটি শেয়ার ৬০ টাকা দরে বিক্রি করলেও কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাবে ৩০ টাকা করে দেখিয়েছেন।
এতে কোম্পানির হিসাবে ৬০ কোটি টাকা জমা পড়েনি। এ অর্থ উদ্যোক্তাদের পকেটে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূল্য কম দেখানোর কারণে সরকারও প্রায় ৯০ লাখ টাকা কর বঞ্চিত হয়েছে।
সম্প্রতি লক ইন উঠে যাওয়ার পর প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর সংগ্রহের সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। গত ১০ নভেম্বর এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে লেখা চিঠিতে ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোম্পানি ৩০ টাকা করে শেয়ার বিক্রির তথ্য দিলেও কিছু প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী ৬০ টাকা করে শেয়ার কেনার দাবি করেছেন। তারা এর স্বপক্ষে গ্গ্নোবাল হেভি কেমিক্যাল কোম্পানির দেওয়া শেয়ার কেনার রসিদও ডিএসইতে জমা দেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটি আইপিও প্রক্রিয়ার আগে ৫ কোটি সাধারণ শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে এ কোম্পানির উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন অপর একটি কোম্পানি অপসোনিনের কাছে ৩০ টাকা দরে ৩ কোটি শেয়ার বিক্রি করা হয়। বাকি ২ কোটি শেয়ার ৬০ টাকা দরে মোট ১২০ কোটি টাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে এরমধ্যে কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাবে ৬০ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর ধারণা করছে, উদ্যোক্তারা বাকি ৬০ কোটি টাকা নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়াম থেকে অর্জিত আয়ের ওপর ৩ শতাংশ করহারে অন্তত ৯০ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি জহরলাল সাহা নামের এক বিনিয়োগকারী ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্গ্নোবাল হেভি কেমিক্যাল কোম্পানির ৫০ হাজার শেয়ার কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা জমা দেন। এছাড়া একই কোম্পানির দুই লাখ শেয়ার কেনার জন্য ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শেয়ার প্রতি ৬০ টাকা দরে মোট এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেয়। উভয়ের কাছে কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া অর্থপ্রাপ্তির রশিদও রয়েছে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সবুর খান এবং এমডি আবদুর রউফ খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও এ বিষয়ে তাদের জানা যায়নি। তবে কোম্পানি সচিব আহাদুজ্জামান খান প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, 'আইপিওর আগে আমরা ৩০ টাকা দরে ৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করেছি। এরমধ্যে নিজেদেরই কোম্পানি অপসোনিন নিয়েছে ৩ কোটি শেয়ার। বাকি শেয়ারও একই দরে বিক্রি করা হয়েছে।'
৬০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রির রশিদ এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে জানালে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছ থেকে নিয়ে কোনো ব্রোকারেজ হাউস বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। তার দায় আমাদের নয়।'জানতে চাইলে কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টের এমডি গোলাম সারোয়ার বলেন, পেল্গসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছে কোম্পানি।
এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগে কোম্পানিটি বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন দামে শেয়ার বিক্রি করেছিল। ২০১১ সালে এ নিয়ে কথা উঠলে তখনই এর মীমাংসা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
গ্গ্নোবাল হেভি কেমিক্যাল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে ২৪ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানির আইপিও আবেদন অনুমোদন করেছিল বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, আইপিও অনুমোদনের আগে কমিশন কোম্পানিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর অনুমতি দেয়। এক্ষেত্রে দর নির্ধারণ করে না। তবে কোম্পানিকে পরবর্তী সময়ে কত টাকা দরে কতটি শেয়ার বিক্রি করেছে সে সম্পর্কে তথ্য জানাতে হয়।
এক্ষেত্রে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা তথ্য গোপন করলে তা বেআইনি হবে। এ বিষয়ে তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অডিটর ও ইস্যুয়ার কোম্পানির কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১৭ নভেম্বর ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন