রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি

দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। একইসঙ্গে বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সাতটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। 
 
এক প্রতিবেদনে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আর্থিক খাতের নানা দিক মূল্যায়ন করে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি' শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতির জন্য সাতটি চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
 
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে এরই মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির অনেক সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে আসছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ এরই মধ্যেই কমে গেছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ায় বিশ্ববাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
এর ফলে রফতানি আয়ও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি পৃথক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছে।
জিইডি মনে করে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছাড়াও আরও কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে_ নিম্নমানের ও অপ্রতুল অবকাঠামো; অর্থনীতি বহুমুখিতার অভাব; ব্যবসা শুরু করতে বেশি ব্যয়; শ্রমিকদের অদক্ষতা; যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার সঙ্গে বন্দরের অবকাঠামো দুর্বলতা। এ ছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যা ঘনত্বকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকারি এ বিভাগটি।
জানতে চাইলে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম সমকালকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে অর্থনৈতিক সূচকগুলো এখনও স্থিতিশীল রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। চলমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিনিয়োগ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেও যাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিক বিবেচনা করে শতভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে সেটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় অনেক কম। ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ ধরা হলেও অর্জিত হয় ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
 
পরের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও অর্জিত হয় ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে অর্থনীতিতে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে এরই মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও গত চার অর্থবছরের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে, যা পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের তুলনায় অনেক ভালো।
 সূত্র: দৈনিক সমকাল, নভেম্বর ১০, ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন