খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে

বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। তবে আগের চেয়ে বৃদ্ধির গতি খানিকটা কম। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, এতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দশমিক ৮৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে যার পরিমাণ ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৩০৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এটি সে সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা চার লাখ ৩৯ হাজার ২১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ ছিল।
সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিশেষত রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী, জনতা, সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির বড় অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে দেশি ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকটাই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রস্তুত করা সেপ্টেম্বরভিত্তিক ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশন-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে জুনের প্রতিবেদনের তুলনায় এসব তথ্য মিলেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ও বেসিক এবং কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) বড় ধরনের ঋণের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও দেশের ন্যাশনাল ব্যাংকেও বড় সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে। বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঞ্চিতি ঘাটতিও বিরাট। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোতে সঞ্চিতি ঘাটতি না থাকলে সার্বিক ঘাটতি গিয়ে ঠেকেছে তিন হাজার ২৮১ কোটি টাকায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার তথ্যও মিলেছে এই দফা ঋণ শ্রেণীকরণ ও সঞ্চিতি প্রতিবেদনে। দেখা যাচ্ছে, গত তিন মাসে সার্বিক ঋণ বেড়েছে মাত্র চার হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণ বেড়েছে চার হাজার ৪১০ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ঋণ শ্রেণীকরণ ও সঞ্চিতির বিধান কার্যকর হয়েছে। এতে করেও কিছু ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধান বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশের ব্যাংক খাত আরও একটি মানদণ্ডে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
ব্যাংক খাতের সংরক্ষিত এই প্রভিশন ও স্থগিত সুদ আয়কে (খেলাপি চিহ্নিত করা ঋণের সুদ ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারে না) সমন্বয় করা হলে খেলাপি ঋণ বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকের নিচে নেমে আসে। এই হিসাবে খেলাপি ঋণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন বিধান অনুসারে নিম্নমান পর্যায়ে শ্রেণীকৃত ঋণকে এখন খেলাপি বলা হচ্ছে না এই অর্থে যে, এতে গ্রাহকের নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় নেই। তবে এ পর্যায়ে ব্যাংককে ঠিকই সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আগের মতো এই পর্যায়ের ঋণকে বিরূপভাবে শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যেই রাখছে, অশ্রেণীকৃত হিসাবে দেখাচ্ছে না। এই প্রতিবেদনে খেলাপি বলতে পুরো শ্রেণীকৃত ঋণকেই বোঝানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার বিরূপ শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে নিম্নমানের ঋণ হচ্ছে ১০ হাজার ১২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বরে এসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়েছে ২৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জুনে ছিল ২৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১০, ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন