অর্থনৈতিক কার্যক্রম ১০ বছরে দ্বিগুণ

অর্থনৈতিক কার্যক্রম ১০ বছরে দ্বিগুণদশ বছরের ব্যবধানে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ৭৬ হাজার। ২০০৩ সালের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শুমারিতে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭ লাখ ৮ হাজার। এর ফলে দশ বছরের ব্যবধানে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে ১১৮ শতাংশ।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে তৃতীয় অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব). এ কে খন্দকার। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও বিনিয়াগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান ও বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক ফল উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিবিএসের কার্যক্রম অনেক উন্নত মানের। তথ্য ব্যবস্থাপনায়ও অনেক সুনাম অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অনেক ভালো, সে প্রমাণও ইতিমধ্যে দিয়েছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে রাজনীতিবিদরা এটা নষ্ট করে দেন। বাংলাদেশের অপুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। গত দশক থেকে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। দেশের একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু উৎপাদন ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখন শিল্প খাতে মনোযোগ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, সারাদেশে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই বিগত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের সকল অর্থনৈতিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছাড়া দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।
তৃতীয় অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক ফলে বলা হয়, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৭২টি, চট্টগ্রামে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৭টি, রাজশাহীতে ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৩টি, রংপুরে ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৫টি, খুলনায় ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮১টি, বরিশালে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৩টি এবং সবচেয়ে কম পরিলক্ষিত হয়েছে সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৩টি। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ ইউনিট রয়েছে গ্রামে, আর মাত্র ২৮ শতাংশ শহরে। শুমারিতে অর্থনৈতিক ইউনিট বলতে স্থায়ী কাঠামোতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সময়ের ব্যবধানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৬ সালে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৯টি এবং ২০১৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬টি। একই সময়ে খানাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্রুত বিস্তার হয়েছে।
২০১৩ সালে খানাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে খানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮টি, যা ২০০৩ সালে ছিল মাত্র ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫৫টি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিগত দশ বছরে উত্তরাঞ্চলে উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধিতে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। ২০০৩ সালের চেয়ে ২০১৩ সালে পল্লী এলাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির হার শহর এলাকার তুলনায় বেশি হয়েছে।
এ হার পল্লী এলাকায় ১৫০ দশমিক ৬০ ভাগ এবং শহর এলাকায় ৬২ দশমিক ৯০ ভাগ। এমনকি রংপুরের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ বিভাগে ১৯৮৬ সালে অর্থনৈতিক ইউনিট ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ১৩৫টি ;কিন্তু ২০১৩ সালে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৫টি।
অর্থনৈতিক ইউনিট বৃদ্ধিতে সেবা খাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সেবা খাত যেমন মোটরগাড়ি এবং মোটরসাইকেল মেরামতসহ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা সর্বোচ্চ ৪৫ দশমিক ৯১ ভাগ স্থান দখল করে আছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৮৬ সাল থেকে অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করে আসছে। ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক শুমারিসহ তিনটি শুমারি সম্পন্ন করেছে। সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল ২০০৩ সালে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১৮ নভেম্বর ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন