জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা কমছে

জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা কমছেরাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এর বিরূপ প্রভাবে রাজস্ব আদায়, রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ও বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে তা কমানোর চিন্তা-ভাবনা করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘোষণায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল' বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়।
আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ সচিব ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত পাঁচ বছরের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধির একটি হিসাব উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না।
এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৬ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন অর্থমন্ত্রী। ফেব্রুয়ারিতে এর সংশোধন করার কথা বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এডিবি চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে না বলে আভাস দেয়। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করে তারা। ওয়াশিংটন ও ম্যানিলাভিত্তিক এ দুটি দাতা সংস্থার আভাস সত্য হলে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছর থেকে কম হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলমান হরতাল কর্মসূচির কারণে রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর আদায় কমেছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি হবে। বৈঠকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনেরও প্রস্তাব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। এর পর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে রাজি হন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সরকারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে।
নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ইউরোপ ও আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্য প্রবাহে ভাটা পড়েছে বলে ইআরডির পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়।
সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর তৈরি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্সের আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমে যাওয়ায় লেনদেনের ভারসাম্য চাপে আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রবাসী আয়ের উল্লম্ফন অর্থনীতিতে স্বস্তি দিলেও এখন চিত্র বদলে গেছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। একই সময়ে জনশক্তি রফতানি কমেছে ৩৯ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রফতানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে রফতানি আয় 'সন্তোষজনক' মন্তব্য করলেও নিকট ভবিষ্যতে এ প্রবণতা ধরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করা হয়।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১৮ নভেম্বর ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন