কোলকাতার মেট্রো রেলে বাংলাদেশি মহিলার সন্তান প্রসব, নাগরিকত্ব জটিলতা

বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার কালিয়ারহিত গ্রামের বাসিন্দা মুমতাজ বেগম গত শুক্রবার দুপুরে আচমকাই কলকাতার মেট্রেরেলে (পাতাল রেল বলে পরিচিত) এক কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। গিরিশ পার্ক স্টেশনের প্লাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ও মেট্রোরেলের সহায়তায় তাকে ভর্তি করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজে। গত রবিবার শিশুসহ মুমতাজকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মুমতাজ এখন চিন্তায়, তার কণ্যা সন্ত্যানের নাগিরিকত্ব নিয়ে। দিশা পাচ্ছেন না কিভাবে বা সংগ্রহ করবেন বার্থ সার্টিফিকেট। চার সন্তানের জননী হলেও তার বড় মেয়েটি মারা গিয়েছে আগেই তাই এই মেয়ে এক সুস্থভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। 
মুমতাজের বড় ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চলছে হাজরার কাছের চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল ক্যানসার ইস্টিটিউটে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর কেমোথেরাপির জন্য ছেলেকে নিয়ে আসতে হয় কলকাতায়। আগে বৈধভাবে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে চিকিৎসা করাতে এলেও তবে এবার বারো দিন আগে অবৈধবাবেই সীমান্ত পেরিয়ে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন কেমোথেরাপি দিতে। ছেলে এখন ভর্তি হাসপাতালে। শুক্রবার ছেলেকে ছেড়ে দেবার কথা ছিল। তাকে নিতেই জাবড়ায় তার এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে সকালের হাসপাতালে এসেছিলেন মুমতাজ। তিনি নিজেও ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। সকালে এসে জানতে পারেন ছেলেকে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এই সময়ই মমতাজের শরীর খারাপ লাগছে বলায় তার আত্মীয বাড়িতে খবর পাঠিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। যতীন দাস স্টেশন থেকে তারা মেট্রোতে ওঠেন। কিন্তু প্রবল প্রসব যন্ত্রণা দেখা দেওয়ায় মুমতাজকে নিয়ে তার আত্মীয় গিরিশপার্ক স্টেশনে নেমে পড়তে বাধ্য হন। এর স্টেশনেই ভূমিষ্ট হয় কন্যা সন্তান। কোনওরকমে কাপড়ের আড়াল তৈরি করে স্টেশনের বাইরে এনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেই থেকেই মিডিয়ায় পরিচিতি হয়ে উঠেছে শিশুটি ‘মেট্রো কন্যা’ হিসাবে। মিডিয়া শিশুর যে নাম দেবে তাই মেনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুমতাজ ও তার আত্মীয়। 
তবে মুমতাজের এই মেট্রো কন্যার নাগরিকত্ব কি হবে তাই নিয়ে সমস্যা দেখা দিযেছে। অবৈধভাবে ভারতে আসায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। না হলে আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে বার্থ সাটিফিকেট যোগাড় করে মুমতাজের দেশে ফেরা সহজ ছিল। এই সমস্যা নিয়ে দিশেহারা মুমতাজ ও তার এপারের আত্মীয়রা।
 সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ১১ নভেম্বর ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন