সমৃদ্ধি সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ


লন্ডনভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার করা সমৃদ্ধি সূচকে বিশ্বের দশম অর্থনীতির দেশ ভারতের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
লেগাটাম ইন্সটিটিউটের ২০১৩ সালের বার্ষিক সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশ ১০৩তম এবং ভারত ১০৬তম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের ১৪২টি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শাসন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নাগরিকদের জীবনমান ও নিরাপত্তাকে ভিত্তি ধরে এই তালিকা করেছে সংস্থাটি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস একটি সম্পাদকীয় ছেপেছে। 'প্যারোকিয়াল প্রোগ্রেস' শিরোনামের ওই নিবন্ধে বলা হয়, এক সময় যাকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলা হতো সেই বাংলাদেশ এখন ব্রিক-ব্র্যান্ডধারী প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ভালো করছে। লেগাটাম ইন্সিটিটিউটের সূচকের কথা তুলে ধরে এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে জোসেফ অলচিনের ওই নিবন্ধে। জীবনমানের অনেক সূচকে বাংলাদেশ শুধু ভারতের চেয়ে ভালোই করছে না, উল্লেখ করার মতো এগিয়ে রয়েছে, বলেছেন অমর্ত্য সেন। বাংলাদেশের অগ্রগতির পেছনে রপ্তানিমুখী শিল্পের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে নিবন্ধে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্মজীবীদের ২৮ শতাংশের বেশি শিল্প খাতে নিয়োজিত। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছে। তাদের বড় অংশ নারী, যারা আগে কৃষিতে টুকিটাকি সাহার্য-সহযোগিতা করতেন। অর্থনীতিতে তাদের অবদান ছিল সামান্য। অন্যদিকে ভারতের কর্মজীবী মানুষের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ শিল্প খাতে নিয়োজিত। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরপর ভারত ব্যাপকভাবে শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকলেও আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতায় তা মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ভারতের অর্থনীতির উদারীকরণের ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কারণে তথ্য-প্রযুক্তি ও আউটসোর্সিংয়ের মতো সেবা খাত বিকশিত হয়। কিন্তু এ খাতে শুধু যাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা রয়েছে তাদেরই কর্মসংস্থান হয়। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ বাইরেই থেকে যায়। নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে ভারতের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ হলেও মানব উন্নয়ন সূচকে তারা অনেক নিচে। এর ব্যাখ্যায় অমর্ত্য সেন বলেছেন, ১৯৯০ সালে ভারতে শিশু মৃত্যুর হার বাংলাদেশের চেয়ে ২০ শতাংশ কম থাকলেও ২০১১ সালে বাংলাদেশে তা ভারতের চেয়ে ২৫ শতাংশ কমে এসে দাঁড়িয়েছে। আর ২০০৯ সালে ভারতে যেখানে ৭৪ শতাংশ শিশু অ্যানেমিয়ায় (রক্ত স্বল্পতা) ভোগে সেখানে বাংলাদেশে এ হার ৪৭ শতাংশ। নিবন্ধে জেন্ডার ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাইলা কবীরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ শুধু পরিবারের দারিদ্র্যই কমাচ্ছে না, নারীর হাতে অর্থ আসায় পরিবারে মানব উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিয়মিত বেতনের নিশ্চয়তায় নারীরা তাদের সন্তানকে স্কুলে দেয়া ও সঞ্চয়ের মতো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা দুর্বলের শক্তিশালী হয়ে ওঠার একটি আগ্রহোদ্দীপক সফলতার কাহিনী, বলা হয় নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে।
এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহিংসতায় অনেক মেধাবীকে হারায় দেশটি। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে গুটিকয়েক মধ্যবিত্ত ছিল। আর ছিল দরিদ্র মানুষ, যাদের অধিকাংশই গ্রামের। ১৯৭৫ এ পশ্চিমাপন্থী সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমিত আকারে অর্থনীতির উদারীকরণ করা হয়, যার থেকে সুবিধা নেয় বাংলাদেশি উদ্যোক্তরা। পশ্চিমা দেশগুলোকে যাতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে না হয় সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে কোটা আরোপ করা হয়। তবে অতি দরিদ্র দেশগুলোকে সব ধরনের বিধি-নিষেধ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আশির দশকে বাংলাদেশের নতুন সামরিক অভিজাতরা সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় তৈরি পোশাক কারখানা চালু করে। এরপর তা দ্রুত বিকশিত হয়। এখন বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।
সূত্র: দৈনিক যায় যায় দিন, ২৬ নভেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন