পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষায় 'পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক' প্রতিষ্ঠার সরকারি উদ্যোগের বিপক্ষে মত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ মুহূর্তে আর তফসিলি ব্যাংক তো নয়ই, বিশেষ আইন দ্বারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা না করারও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পর অবশ্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে। জানা গেছে, বিশেষ আইনের মাধ্যমেই সরকার ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার মতামতে বলেছে, বিশেষ আইন দ্বারা যেসব ব্যাংক করা হয়েছে তার কোনোটিই ভালো অবস্থানে নেই। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ জমা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে নতুন এ ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামে সংগঠন তৈরিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্পের মাধ্যমে যেভাবে গ্রামাঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে সহযোগিতা করা হচ্ছে, প্রস্তাবিত ব্যাংকটি সে কাজ করবে। এছাড়া ব্যাংক কার্যকর হওয়ার পর এ প্রকল্পের সব সম্পদ, জনবল, দায়-দেনা ইত্যাদি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আমানত সংগ্রহ বা ঋণ দেওয়া যায় না। এছাড়া রেমিট্যান্সসহ যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয়। একই সঙ্গে বিশেষ আইন দ্বারা এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংক করা হয়েছে তার কোনোটিই লাভজনক পর্যায়ে আসতে পারেনি। এমনকি এসব ব্যাংকের কোনোটিই যে কারণে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেক্ষেত্রে আশানুরূপ সফলতা দেখাতে পারেনি। এতে করে বিশেষ আইন দ্বারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমানে প্রচলিত অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ করা যায় কি-না সরকারকে তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সমকালকে বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন তফসিলি ব্যাংক করতে হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী আবেদন আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টি উত্থাপনের পর সব ধরনের পর্যালোচনার করে ব্যাংক দেওয়া যাবে কি-না তা সিদ্ধান্ত হবে। এরপর আইন অনুযায়ী সরকারকে ৪০০ কোটি টাকার মূলধন জমা দিয়ে সব ধরনের শর্ত পূরণ করে আসতে হবে। তবে বিশেষ আইন দ্বারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, এ ব্যাংক চেকের বিপরীতে সদস্য ও অসদস্যদের থেকে সঞ্চয় ও আমানত সংগ্রহ করবে। সমিতি ও সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ ও মাঝারি ঋণ বিতরণ করা যাবে। এছাড়া রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও বিতরণ, এলসি ইস্যুসহ সব ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে তার ভাতাভোগীর মাঝে এই ব্যাংক অর্থ দেবে। তবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সবচেয়ে বড় কাজ হবে আমানত সংগ্রহ।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড, রেডি ক্যাশ কার্ড ইস্যু করা ও বাজারজাত করতে পারবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সরকারের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক বন্ড ও ঋণপত্র জারি এবং বিক্রি করতে পারবে। ব্যাংকের উদ্যোক্তা হবে সরকারের পক্ষে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে তিন হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১০০ টাকা মূল্যমানের ৩০ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত থাকবে। ব্যাংকের প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধন হবে ৬০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫০ শতাংশ দেবে সরকার, বাকি ৫০ শতাংশ প্রকল্পের আওতায় গঠিত সদস্য সমিতি থেকে পরিশোধ করা হবে। ব্যাংকের যে লভ্যাংশ আসবে তার পুরোটাই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য সমিতির অনুকূলে সংরক্ষিত থাকবে এবং লভ্যাংশ তারাই পাবেন।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ০৬ নভেম্বর, ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন