গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত: ড. ইউনূস

গ্রামীণ ব্যাংকের আইন পরিবর্তনে এর ধবংস অবধারিত উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বুধবার ইউনূস সেন্টার প্রেরিত এক প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, সরকার কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে পরিবর্তন আনাকে তীব্রতম ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের বিবেচনাহীনতায় জাতির একটা পরম গৌরবের প্রতিষ্ঠানকে এই ধ্বংসের পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি জাতিকে প্রত্যক্ষ করতে হলো। গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি করা হয়েছিল গরীব মহিলাদের মালিকানায় এবং তাঁদের ব্যবস্থাপনায় একটা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। এই আইনে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। এই কারণেই গ্রামীণ ব্যাংক জাতিকে আন্তর্জাতিক সম্মানের সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছিল। এখন সরকার এই আইন পরিবর্তন করে তাতে এমন সব সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে যাতে সরকার এই ব্যাংককে একশতভাগ নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে। আইনের এই সংশোধনের ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের চরিত্রে একটা মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসা হলো। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধবংস অবধারিত হলো।

তিন আরো উল্লেখ করেন, জাতি হিসেবে এখন আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের কোন অনিষ্ট হবার আগেই দ্রুততম সময়ে আমরা এই আইনের পরিবর্তনগুলি বর্জন করে ফেলতে পারি। দেশের সব মানুষ, গ্রামীণ ব্যাংকের সব ঋণ গ্রহিতা-মালিক, তাদের পরিবারের সদস্যবর্গ, ব্যাংকের সব কর্মচারী-কর্মকর্তা এ লক্ষ্যে একযোগে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি কামনা করেন।

উল্লেখ্য, বহুল আলোচিত গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩ গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। বিলে গ্রামীণ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি সংক্রান্ত বলবত্ অন্য যে কোন আইনের বিধানসমূহও এখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। বিলে বলা হয়েছে, বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন যিনি সরকার নিযুক্ত পরিচালকদের মধ্যে থেকে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। নির্বাচিত পরিচালকদের কার্যকাল হবে তিন বছর। কোন পরিচালক একাধিক্রমে দুই মেয়াদ পরিচালক থাকার পর তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত আর পরিচালক পুনঃনির্বাচিত হতে পারবেন না। নতুন আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড গঠিত হবে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত তিনজন প্রতিনিধি এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহিতা শেয়ার হোল্ডার কর্তৃক নির্বাচিত নয়জন ব্যক্তি দ্বারা। গ্রামীণ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে এর মাধ্যমে সরকার ব্যাংকটির পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে চায়।

কালো ব্যাজ ধারন:

গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ সামশুল আলম গতকাল জানিয়েছেন, গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ পাসের প্রতিবাদে গ্রামীণ ব্যাংকের সব কর্মকর্তা কর্মচারী আগামীকাল বৃহস্পতিবার কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে ঢাকায় কর্মরত সব কর্মকর্তা কর্মচারী কালো ব্যাজ পরিহিত অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২টা থেকে প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করবেন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ নভেম্বর, ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন