ডেসটিনিতে প্রশাসক বসতে পারে

বিতর্কিত বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনিতে একাধিক প্রশাসক বসাতে পারে সরকার। এমএলএম আইন পাসের পর সম্প্রতি ওই আইন বাস্তবায়নের জন্য যে বিধিমালা তৈরি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তার আলোকেই নিয়োগ দেওয়া হবে প্রশাসক। বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে আগের দিন সোমবার আন্তমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক ডাকা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে। তার পরই শুরু করা হতে পারে ডেসটিনিতে এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের কাজ।

ডেসটিনি গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করতে গেলে একাধিক প্রশাসক প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। জনগণের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে বেশির ভাগই আত্মসাৎ করেছে ডেসটিনি গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় সটিনির ২২ কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, পরিচালক দিদারুল আলম ওই মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে। বাকিদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড ও ট্রি প্ল্যানটেশনের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এক বছর থেকেই জমি, ফ্ল্যাট ও গাড়িসহ ডেসটিনির যাবতীয় সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্ব পুলিশ পালন করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি দখলে নিয়ে ‘এই সম্পদের রিসিভার/তত্ত্বাবধায়ক পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি, ঢাকা’ শিরোনামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে পুলিশ। যদিও পুরো সম্পত্তি নিজের দখলে নিতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।

ডিএমপি হিসাব করে দেখেছে, রফিকুল আমীন ও তাঁর স্ত্রী ফারাহ দীবার নামে রাজধানীতেই ৩০টি ফ্ল্যাট-প্লট রয়েছে। মোহাম্মদ হোসাইনের নামে রয়েছে সাতটি ফ্ল্যাট-প্লট। ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ এমডি ও চেয়ারম্যানসহ গ্রুপের পরিচালকদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হয়েছে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিন্ন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার করেছে ডেসটিনি। প্রশাসক নিয়োগের জন্য বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডেসটিনিসহ সব এমএলএম কোম্পানির জন্যই তা প্রযোজ্য হবে। কোম্পানির সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংরক্ষণ, আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা ও গ্রাহকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব থাকবে প্রশাসকের হাতে। প্রশাসক নিয়োগ পাবেন এক বছরের জন্য। তবে সরকার চাইলে এ মেয়াদ বাড়াতে-কমাতে পারবে।

কোম্পানির সাধারণ কার্যক্রমও পরিচালনা করবেন প্রশাসক। কোম্পানির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব সংরক্ষণের পাশাপাশি আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণও তাঁর দায়িত্ব। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচালনা করবেন এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন প্রশাসক। জানা গেছে, সরকার নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্বও পালন করবেন প্রশাসক। কোম্পানির চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে কাজ করবেন তিনি।

বিধিমালার খসড়ায় আরও বলা হয়, লাইসেন্স ছাড়া কোনো এমএলএম কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্সের মেয়াদ হবে এক বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগেই লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। প্রশাসক নিয়োগ হতে পারে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডেসটিনির কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই ডেসটিনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে টিকে থাকে, সরকারের দিক থেকে সে রকম উদ্যোগ।’ ডেসটিনির প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
সূত্র: দৈনিক প্রথমআলো, ০৭ নভেম্বর, ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন