কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ উপেক্ষা

মশলা, ডাল ও তেলবীজ জাতীয় ফসল চাষে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো সব সময় অনীহা দেখিয়ে আসছে। আর এ অনীহার কারণে আমদানি বিকল্প এসব ফসল চাষে ঋণের বিপরীতে সুদ ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিবছরই এ খাতে ঋণ বিতরণ কমছে। বেশি লাভের আশায় শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে ঋণ দিতেই ব্যাংকগুলো বেশি আগ্রহী। তাই বৃহত্তর স্বার্থে আমদানি বিকল্প ফসল চাষের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণে আগ্রহী করতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিষয়। জানা গেছে, স্বল্প সুদের এ ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি ব্যাপক প্রচারণা চালানোর নির্দেশ রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার উল্টো কাজটাই করছে। কোন কৃষক এ ঋণ নিতে আসলে তাকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে সহায়তার পরিবর্তে নানাভাবে হয়রানি করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলা হয়, চলতি বছরের জন্য দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে, তাই এ বছর আর ঋণ পাওয়া যাবে না। গ্রাহকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে ব্যাংকগুলোতে এ খাতে ঋণ বিতরণে প্রচার প্রচারণায় নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংকের শাখায় ব্যানার এবং ফেস্টুন সাজিয়ে এ প্রচারণা চালাতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ৪% রেয়াতি সুদহারে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১.৪১%। অবশ্য এর মধ্যে জুলাই মাসে কোন ব্যাংক এ খাতে এক টাকাও ঋণ বিতরণ করেনি। অন্যদিকে ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিতরণ ৮.২৪% কমেছে। ব্যাংকগুলো ২০১২-১৩ অর্থবছর এ খাতে মাত্র ৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এর আগের অর্থবছর দিয়েছিল ৮১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ কমেছে ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অথচ এ সময়ে মসলা জাতীয় সব পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে কয়েকগুণ। আর দেশে উৎপাদন না বাড়ায় আমদানিও বেড়েছে। গত অর্থবছর সোনালী ব্যাংক ১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক দিয়েছে ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দিয়েছে ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো দিয়েছে ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ‘কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি’ এর আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে আদা, রসুন, পিয়াজ, মরিচ, হলুদ, জিরা, সব ধরনের ডাল, তেলবীজ এবং ভুট্টা চাষে মাত্র ২% সুদে এ ধরনের ঋণ দেয়া শুরু হয়। পরে সুদের হার বাড়িয়ে ৪% করা হয়।
এ সুদে ঋণ দিয়ে ব্যাংক যাতে ক্ষতিতে না পড়ে সেজন্য এ ঋণের বিপরীতের ব্যাংকগুলোকে সরকার ৬% সুদ ভর্তুকি দেয়। প্রথমে শুধুমাত্র সরকারী ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঋণ দিত। পরবর্তী পর্যায়ে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্যও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
 সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ১৯ নভেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন