পোশাককর্মীদের ৫৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ
সোমবার মজুরি বোর্ডের নবম সভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বোর্ডে মালিকপক্ষের দুই প্রতিনিধি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভোট না দিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন তারা।
কিন্তু
শ্রমিকরা এর আগে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানালেও
সোমবার বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের দুই প্রতিনিধি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।
এদিকে, বৈঠক চলার সময় সোমবার মজুরি বোর্ডের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বৈঠক
শেষে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে রায় সাংবাদিকদের বলেন, "ভোটাভুটির
মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্য গ্রেডগুলোর মজুরি আগের মতো আনুপাতিক হারে বাড়বে।"
আজকালের
মধ্যেই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "গেজেট প্রকাশের
১৫ দিনের মধ্যে যেকোনো পক্ষ তাদের মতামত দিতে পারবে। মতামত পেলে আবারও
আলোচনা হবে। কোনো মত না থাকলে বোর্ডের পক্ষ থেকে ১৫ দিন পর শ্রম
মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ জমা দেওয়া হবে।"
মজুরি
বোর্ডের সভাপতি আরও বলেন, "দু'পক্ষ কোনো সমঝোতায় না আসায় নিয়ম অনুযায়ী
ভোটাভুটিতে যেতে হয়েছে। এতে ৬ সদস্যের মধ্যে ৪ জন ৫ হাজার ৩০০ টাকার পক্ষে
ভোট দিয়েছেন। মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা ভোট না দিয়ে চলে গেছেন। তারা বোর্ডের
সিদ্ধান্তপত্রে স্বাক্ষর করেননি।"
সোমবার রাজধানীর
তোপখানা রোডে বোর্ড কার্যালয়ে নবম বৈঠক সকাল ১১টায় শুরু হয়। চেয়ারম্যান এ
কে রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বোর্ডের ছয় সদস্যের সবাই এবং
মালিকপক্ষে পর্যবেক্ষক হিসেবে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম
মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মজুরি বোর্ডের
তৃতীয় বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার ১১৪ টাকার
প্রস্তাব করা হয়। পঞ্চম বৈঠকে মালিকপক্ষ ৩ হাজার ৬০০ টাকা প্রস্তাব করে। গত
বৈঠকে তারা ৪ হাজার ২৫০ টাকার সংশোধিত প্রস্তাব করে। সেই সভায় আলোচনার
একপর্যায়ে তারা সাড়ে চার হাজার টাকায় সম্মত হয়।
তবে
তাদের ওই অবস্থানের প্রতি শ্রমিক প্রতিনিধিদের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায়
মৌখিক সম্মতি থেকে সরে সোমবারের বৈঠকে লিখিত প্রস্তাবের অবস্থানে অর্থাৎ ৪
হাজার ২৫০ টাকার প্রস্তাবে ফিরে যায় তারা।
এদিকে,
সুপারিশ করা এই বেতন কাঠামো নিয়ে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দেখা গেছে। তাদের একপক্ষ সুপারিশকে স্বাগত জানালেও আরেকপক্ষ আট হাজার টাকার
দাবিতে বোর্ডের সামনে সমাবেশ করেছে।
সুপারিশকৃত বেতন কাঠামোকে শ্রমিক নেতাদের একপক্ষ স্বাগত জানালেও আরেকপক্ষ আট হাজার টাকার দাবিতে বোর্ডের সামনে সমাবেশ করেছে।
বৈঠক
শেষে শ্রমিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু সাংবাদিকদের বলেন,
"বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল বেতন ৩ হাজার ২০০ টাকার ৪০ শতাংশ হারে বাড়ি
ভাড়া এক হাজার ২৮০ টাকা, ১০ শতাংশ হারে চিকিৎসা ভাতা ৩২০ টাকা ও খাদ্য
ভাতা বা ভর্তুকি হিসেবে আরও ৩০০ টাকা- এ নিয়ে মোট ৫ হাজার ৩০০ টাকার
সুপারিশ করা হয়েছে।"
তিনি জানান, কোনো মালিক এতদিন ধরে খাদ্য ভাতা সুপরিশের বেশি দিয়ে থাকলে এখনও সে হারেই দিতে হবে।
শ্রমিকরা
এ সুপারিশ মেনে নেবে কি-না- এ প্রশ্নের জবাবে ফজলুল হক বলেন, "এ হার
অপ্রতুল। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মেনে নিয়েছেন তারা।"
বোর্ডে
শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, "তাদের প্রত্যাশা আরেকটু বেশি
ছিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সুপারিশ মেনে নিয়েছেন তারা।"
এ
অবস্থায় শ্রমিকদের মনোযোগ দিয়ে উৎপাদনে নেমে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আশা
প্রকাশ করেন, শেষ পর্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা থেকে মালিকপক্ষ মজুরি বোর্ডের
সুপারিশ মেনে নেবে।
মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের দিন থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
মালিকপক্ষের প্রত্যাখ্যান
মজুরি বোর্ডের সুপারিশ প্রত্যাখান করেছেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা।
মন্ত্রণালয়ে
মজুরি আরেক দফা বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী
সাইফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, "মন্ত্রণালয় চাইলে মজুরি আরো বাড়তে
পারে, তবে এই সুপারিশের চেয়ে আর কমানোর সুযোগ নেই।"
বোর্ডের সুপারিশকে যৌক্তিক মনে হয়নি বলে ভোট দান করেননি ও স্বাক্ষর করেননি বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সোমবার রাতে সমকালকে বলেন,
"বোর্ডের সুপারিশ আমরা প্রত্যাখান করেছি। কারণ এই সুপারিশ অনুযায়ী বেতন
দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।"
তিনি জানান,
এ বিষয়ে আজ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে সংবাদ
সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন তারা।
শ্রমিক সংগঠনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এদিকে,
বোর্ডের এই সুপারিশ নিয়ে শ্রমিক নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের দুই প্রতিনিধি ৫ হাজার ৩০০ টাকার সুপারিশ মেনে
নিলেও অনেক শ্রমিক সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান
জানিয়েছে।
১০টি গার্মেন্ট সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত
গার্মেন্টস শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম ওএসকে
গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন বোর্ডের সুপারিশ প্রত্যাখান
করে বলেছে, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী আট হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করা না
হলে সর্বাত্মক ধর্মঘটসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এছাড়া
পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি জানিয়েছে শ্রমজীবী নারী ঐক্য। মজুরি বোর্ডের সভা
চলার সময় বোর্ড ঘেরাও এবং প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন ও মিছিল বের করে আরো
কয়েকটি সংগঠন।
তবে ৮টি শ্রমিক সংগঠন মজুরি বোর্ডের
সুপারিশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এই জোটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ৫ হাজার ৩০০ টাকার সুপারিশে তার
খুশি।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ০৫ নভেম্বর, ২০১৩
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন