মেয়াদি আমানতে সুদহার কমাল সরকারি ব্যাংক
মেয়াদি
আমানতে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। বিনিয়োগ চাহিদা
কমে যাওয়ার কারণে এসব ব্যাংকে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য জমার ফলে মেয়াদি
আমানতের প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্তমানের তুলনায় ৫০ পয়সা করে সুদ কমানোর নীতিগত
সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল
সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ৬ ব্যাংকের এমডিরা বসে এ
সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সব ধরনের আমানত ও
ঋণের সুদ কমানোর বিষয়েও এমডিরা একমত হয়েছেন। শিগগিরই নিজ ব্যাংকের
পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টি উত্থাপন করে নতুন সুদ কার্যকর করা হবে বলে জানা
গেছে।
অগ্রণী
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী,
জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ বিডিবিএল ও
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সব ক'টি
ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) বর্তমান পরিস্থিতি, ঋণ-আমানত
অনুপাত (এডিআর), মেয়াদি আমানতসহ সব ধরনের ঋণ ও আমানতে সুদের হার (এডিআর),
বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা (সিআরআর) পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা
করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা
গেছে, ব্যাংকগুলোতে ৩ মাস থেকে ৬ মাসের কম, ৬ মাস থেকে ১ বছরের কম, ১ বছর
থেকে ২ বছরের কম, ২ বছর থেকে ৩ বছরের কম এবং তিন বছরের বেশি এ পাঁচ ধরনের
মেয়াদি আমানত স্কিম রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বর্তমানে তারা ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১২
শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫০ পয়সা সুদ কমানোর ফলে
মেয়াদি আমানতে সুদ হার সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ শতাংশে নেমে আসবে।
বৈঠকের
বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রীয় মালিকানার রূপালী ব্যাংকের এমডি এম ফরিদ
উদ্দীন সমকালকে বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত তারল্য
রয়েছে। বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গা না থাকায় তহবিলের বিপরীতে সুদ ব্যয় হলেও
আয় তেমন হচ্ছে না। এতে করে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে পরিচালন
আয় কমে যাচ্ছে। সামগ্রিক মুনাফার ওপর যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থের
টানাটানি না থাকায় এখন কলমানি রেটও অনেক কম।
এসব
কারণে প্রাথমিকভাবে সরকারি ব্যাংকগুলোর মেয়াদি আমানতে সুদহার কমানোর বিষয়ে
সব এমডি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনো পক্ষের চাপে নয়, বরং পরিস্থিতির
সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বৈঠক
সূত্রে জানা গেছে, এমডিরা অভিমত দেন সরকারি মালিকানার কোনো ব্যাংকই এখন
কলমানি থেকে ধার নিচ্ছে না। প্রতিদিনই এসব ব্যাংক কলমানিতে বড় অঙ্কের ধার
দিচ্ছে। তবে চাহিদা না থাকায় ৮ শতাংশের কম সুদে এসব অর্থ দিতে হচ্ছে।
সরকারি মালিকানায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের সেপ্টেম্বরভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে তাদের ঋণ আগের
বছরের একই বছরের তুলনায় কমেছে ৩ শতাংশ। বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায়
ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়লেও ঋণ বাড়ছে না। এতে করে কোনো ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি
আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তাদের তহবিল
ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ০৫ নভেম্বর, ২০১৩
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন