মন্ত্রীদের দায়িত্ব কর্মকাণ্ড সবই অবৈধ


মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগের পর তাদের মন্ত্রী হিসেবে তাদের সব রকম কাজের বৈধতা নিয়ে সবমহলেই চলছে তীব্র সমালোচনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ গৃহীত হয়ে গেছে সাংবিধানিকভাবে এই মন্ত্রিসভার কোনো বৈধতা নেই রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে তারা বলেন, এটা এক রকমের তামাশা মন্ত্রীদের পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা বেআইনি সংবিধান পরিপন্থী শুধু তাই নয় ওই সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলোরও কোনো বৈধতা থাকবে না তারা বলেন, ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভার নেয়া সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কেউ যদি আদালতে যান তবে অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বিধান লংঘনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের যে বিধান বর্তমান সরকার করেছে তা তাদের বেলাতেও প্রযোজ্য হবে তারা বলেন, অবৈধ মন্ত্রিসভা তথা অবৈধ মন্ত্রীদের কোনো সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র যদি আর্থিকভাবে কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মন্ত্রিসভার ওপর বর্তাবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, মন্ত্রিসভাসহ তাদের নিয়মিত কাজে যেসব সচিব সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহায়তা করবেন তারাও সংবিধান লংঘনের দায়ে সমভাবে অভিযুক্ত হবেন সরকার আইন-কানুন সংবিধানের তোয়াক্কা না করে হুজ্জতির আশ্রয় নিয়ে গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা

খন্দকার মাহবুব হোসেন : সিনিয়র আইনজীবী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার কোনো বিধান সংবিধানে নেই। সংবিধানের ৫৮()() অনুচ্ছেদটি খুবই স্পষ্ট। বিধান অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের পরে অন্য কোনো যোগদানপত্র বা নিয়োগপত্র দেয়া হয় না। সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়। তেমনি পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা গৃহীত হয়। তাই সংবিধানের ৫৮()() অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, সেই মুহূর্তেই তা গৃহীত হয়ে গেছে। এরপর যদি মন্ত্রীরা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন, কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেন বা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তাহলে তা হবে বেআইনি সংবিধান পরিপন্থী। পাশাপাশি সংবিধান পরিপন্থীভাবে দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালনে সচিবসহ প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সহযোগিতা করবেন তারাও সংবিধান লংঘনের সহযোগিতাকারী হিসেবে সমানভাবে দায়ী হবেন।

. শাহদীন মালিক : মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালন মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বানের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ . শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র প্রদান করলেই সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রী পদ শূন্য হয়ে যাবে। সাংবিধানিক পদাধিকারীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা বা না করার কোনো বিধান সংবিধানে নেই। তাই পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হয়ে গেছে। অবস্থায় দায়িত্ব পালন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগদান কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ হবে অবৈধ সংবিধান পরিপন্থী।

. মাহবুব উল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর . মাহবুব উল্লাহ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ হয়ে গেছে। এর পরে সরকার মন্ত্রিসভার আর কোনো বৈঠক ডাকতে পারে না। মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত এবং নিয়মিত তাদের দাফতরিক কাজের সাংবিধানিক কোনো বৈধতা থাকবে না। আর রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার তো প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ প্রশ্ন তুললে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি বড় ধরনের জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।

. পিয়াস করিম : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাজনৈতিক বিশ্লেষক . পিয়াস করিম বলেন, দেশ কিভাবে চলছে কেউ জানে না। আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে হুজ্জুতের আশ্রয় নিয়ে সরকার গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে। সর্বশেষ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করার পরও আইন-কানুন, সংবিধানকে তোয়াক্কা না করে তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়ে গেছে। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার কোনো বৈধতা সরকারের নেই।
তিনি বলেন, সরকার মন্ত্রিসভার যে বৈঠক ডেকেছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি সংবিধান পরিপন্থী। আর ওই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তারও কোনো বৈধতা থাকবে না। সরকারের এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব। ভবিষ্যতে যে কেউ তাদের কাজকর্মের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করতে পারবেন। এর মাধ্যমে বিএনপিকে আদালতে যাওয়ার একটি সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

আবদুর রব : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আবদুর রব বলেন, সরকার মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে তামাশা শুরু করছে রাষ্ট্রপতি বরাবর না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। সংবিধান মতে মন্ত্রীদের পদত্যাগ হয়ে গেছে। এখন এই মন্ত্রিসভা হলো অবৈধ মন্ত্রিসভা। এই অবৈধ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকাটাও অবৈধ। মন্ত্রিসভা সব কাজ এমনকি ফিতা কাটাটাও হবে অবৈধ। তিনি বলেন, এই অবৈধ মন্ত্রিসভার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ আদালতে গেলে অবশ্যই তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের সুবিধামতো সংবিধানকে ব্যবহার ব্যাখ্যা করে আসছে। মন্ত্রীদের পদত্যাগের ব্যাপারে সংবিধানে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। ওই বিধানমতে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া মাত্র মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়ে গেছে। তরুণ এই সংসদ সদস্য বলেন, পদত্যাগ করার পর থেকে দাফতরিক কোনো কাজ করার রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার নৈতিক সাংবিধানিক অধিকার তাদের নেই। আর মন্ত্রিসভা ডাকার এখতিয়ারের তো প্রশ্নই ওঠে না। পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভায় নেয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অবৈধ সংবিধানবিরোধী। মন্ত্রিসভায় নেয়া যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য ভবিষ্যতে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানান পার্থ।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করেছিলাম, যে মুহূর্তে তারা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, সই মুহূর্ত থেকে তা কার্যকর হয়ে গেছে। এখানে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা না করার কোনো বিষয় নেই। তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বরাবরে লেখা পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এখানেপোস্ট বক্সহিসেবে কাজ করবেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আইনমন্ত্রী বলছেন এটা একটা আনুষ্ঠানিকতা, আবার তারিখ উল্লেখ করেননি- এসব যদি বলেন তাহলে তা হবে জাতির সঙ্গে সাংবিধানিক প্রতারণা। ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এখন যদি মন্ত্রীরা কোনো কাজ করেন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তবে তা হবে অবৈধ সংবিধান পরিপন্থী। মন্ত্রীদের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে নতুনভাবে শপথ গ্রহণের পর তা করতে হবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী নেতা। আর যদি কোনো মন্ত্রী মনে করেন যে পদত্যাগ কার্যকর হয়নি, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টে পাঠাতে হবে সাংবিধানিক ব্যাখ্যার জন্য।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মন্ত্রী বিশেষ করে সরকারের আইনমন্ত্রী, উনি বোঝেন যে সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ কার্যকর হয়ে গেছে, তাই এখনও বলছেন এটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। পদত্যাগী মন্ত্রীদের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের সংবিধান রক্ষা জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য যেন মন্ত্রীরা কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা না করেন। তারা কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করলে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে সংবিধান লংঘনের দায়ে ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ যে কারও আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন সুযোগ-সুবিধা ভোগ হবে সংবিধান পরিপন্থী বেআইনি। কারণ সংবিধানের ৫৮()() অনুযায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র দেয়ার পর তা গৃহীত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী শুধু পদত্যাগপত্রগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেন। এটি গ্রহণ করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধান দেয়নি। জমা দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়ে যায়। তাই পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর সরকারের মন্ত্রীরা বেআইনি সংবিধান পরিপন্থীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন সংবিধানের ৫৬() অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নতুনভাবে মন্ত্রীদের নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। মন্ত্রিসভার বৈঠক করা, কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সবই সংবিধান পরিপন্থী।

. তুহিন মালিক : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী . তুহিন মালিক বলেন, সংবিধানে মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিধানটি অত্যন্ত পরিষ্কার স্পষ্ট। ৫৮()() অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পোস্টবক্সের মতো ভূমিকা পালন করেন। পদত্যাগপত্র দেয়া হলেই তা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে যায়। পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বা রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তিনি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের পদত্যাগ সংবিধানের বিধান তুলে ধরে বলেন, ভারতের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা রয়েছে মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করার। ব্রিটেন বা অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে সে ক্ষমতা নেই। আমাদের দেশে৭২-এর সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগে মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় নেয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটি বাদ দিয়ে দেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল ইসলামেরকন্সটিটিউশনাল বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে . তুহিন মালিক বলেন, এই বইতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক পদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি কোনো কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে না। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীরা সংবিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে শপথবাক্য পাঠ করলেই হয় না, শপথবাক্য পাঠ শেষে একটি স্বাক্ষর করতে হয়। এই স্বাক্ষর থেকেই মন্ত্রীদের নিয়োগ শুরু হয়। দায়িত্বভার গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরু করেন। কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র দেয়া হয় না। আবার পদত্যাগের ক্ষেত্রেও যখনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করবেন, পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, তখন থেকেই তার শপথ চলে যাবে। তাই এখানে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয়। মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিধান সংবলিত ৫৮() অনুচ্ছেদটি একেবারেই স্পষ্ট। বিধানের সঙ্গে কোনো শর্ত, যদি, তবে কোনো কিছুই যুক্ত করে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনাধীন হলে তা কর্মচারী বিধিমালার আওতায় পড়ে যাবে। মন্ত্রীরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না। তারা সাংবিধানিক পদাধিকারী। তাই তাদের পদত্যাগের বিষয়টি কারও বিবেচনার ওপর নির্ভর করে না। তাছাড়া পুরো মন্ত্রিসভা একযোগে বৈঠকের আগে মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব সেটা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়ে তা নিশ্চিত করেছেন। তাই এখন আর তাদের দায়িত্ব পালন বা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগের কোনো অধিকার নেই। এটা করলে তা হবে সংবিধান পরিপন্থী। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বিধান লংঘনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের যে বিধান বর্তমান সরকার করেছে তা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

সাইদুর রহমান : সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী যে মুহূর্ত থেকে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সে মুহূর্ত থেকে পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। তাই তারা রাষ্ট্রের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। আর মন্ত্রিসভার বৈঠক করে এসব পদত্যাগী মন্ত্রী কোনো রকমের সিদ্ধান্ত নিলে বা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে তা হবে অবৈধ সংবিধান পরিপন্থী।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন সব সদস্য পদত্যাগ করায় তারও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার ভিত্তি থাকছে না। তিনি কিসের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তার মন্ত্রিসভার তো কোনো অস্তিত্বই নেই। বরং মন্ত্রীরা পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সংকট তৈরি করেছেন। এমনিতেই দেশে নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সংকট চলছে। ক্ষমতাসীনরা বলছে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। বিরোধী দলের দাবি নির্দলীয় সরকার। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সংকটের একমাত্র সমাধান। অবস্থায় যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভা আর কার্যকর নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা যুক্তিযুক্ত হবে। তার পদত্যাগে রাজনৈতিক সংকট মোচনের পথ প্রশস্ত করবে।
ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, সংবিধানের বিধান খুবই স্পষ্ট। এই বিধানের অপব্যাখ্যা বা ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর ৫৮()()-তে যে বিধান রয়েছে, তা হল বাধ্যতামূলকভাবে মানার বিধান। মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা গৃহীত হয়ে যাবে পদত্যাগপত্রটি অন্য কোথাও পাঠানো না পাঠানোর বিষয় নয়। আনুষ্ঠানিকতারও কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রীদের নিয়োগ, বহিষ্কার পদত্যাগ সংবিধানের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা ছেলেখেলা নাকি? কারও মনোবাসনা পূরণ বা ইচ্ছে পূরণের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এখন মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার কোনো সুযোগ নেই। সবাই এখন সাবেক মন্ত্রী। যদি এভাবে মন্ত্রিসভা ডাকা হয়, কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, পদত্যাগীরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তাহলে তা হবে অবৈধ সংবিধান পরিপন্থী। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করে বলেন, তারাই সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন আবার সংবিধান লংঘনের পাঁয়তারা করছেন। আর এটা করলে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান : সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বলেন, সংবিধানের ৫৮() () অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য বলিয়া বিবেচিত হইবার জন্য দুটি বিষয় আবশ্যক, প্রথমত, মন্ত্রীগণ তাহাদের স্বীয় পদ হতে পদত্যাগের উদ্দেশে পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করিবেন, এবং দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর নিকট উক্ত পদত্যাগপত্রসমূহ প্রদান করিবেন। এক্ষেত্রে, মহাজোট সরকারের সব মন্ত্রী সংবিধান সম্মত উপায়েই পদত্যাগপত্রসমূহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর জমা দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী সব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এমতাবস্থায়, যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রীরা ওই পদত্যাগপত্র প্রদান করেন সেই মুহূর্তেই ওই পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে বলে বিবেচিত হবে
তিনি আরও বলেন, সরকার পক্ষ থেকে এটা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, পদত্যাগ কার্যকর হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করতে হবে। কিন্তু মন্ত্রীর পদ শূন্য হওয়ার জন্য পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে যেমন মন্ত্রীদের নিয়োগ কার্যকর হয়, তেমনি পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শপথ চলে যায়, মন্ত্রিত্ব চলে যায়। এমতাবস্থায়, আগামী রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা সংবিধান পরিপন্থী বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৪ নভেম্বর ২০১৩ 

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন