এনালগ পদ্ধতিতেই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক


রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখনো এনালগ পদ্ধতিতেই চলছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহক। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যুগোপযোগী সেবা দেয়াসহ মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। যদিও এসব ব্যাংকের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজের কত দূর অগ্রগতি হবে এ নিয়েও সন্দিহান ভুক্তভোগীরা। সরকারি মালিকাধীন এ ৪টি ব্যাংকের হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ব্রাঞ্চে অনলাইন সুবিধা আছে। ফলে গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এক ব্রাঞ্চে টাকা জমা দিয়ে তাদের সুবিধা অনুযায়ী অন্য ব্রাঞ্চ থেকে তুলতে পারছেন না। এছাড়া এসব ব্যাংকের অনেক শাখায় কম্পিউটার নেই। নেই গ্রাহকদের সেবা দেয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে গ্রাহকরা রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকে ভিড় জমান। স্বাধীনতার পর উত্তরা ব্যাংক ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকই রাষ্ট্রের অধীনে চলে আসে। তবে এসব ব্যাংকের শুরুর দিকে তেমন কোনো আধুনিকায়নের ব্যবস্থা ছিল না। লেজার (খাতায়) হিসাব-নিকাশ করা হতো। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হলে ব্যাংকগুলোও এর অধীনে চলে আসতে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের কোনোটিরই সব শাখায় কম্পিউটার পদ্ধতিতে সেবা দেয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে নেই অনলাইন সেবার কার্যক্রমও। এসব ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা না থাকার কারণে গ্রাহক এবং আমানতকারীরা আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখনো প্রাচীন আমলের সেবায় চলছে ৪ ব্যাংকের একাধিক ব্রাঞ্চ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৩ সালের মে মাসে চার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মোট শাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৬টি, যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩ হাজার ৪৭৮টি। এর মধ্যে ২ হাজার ২৩৪টি গ্রাম ও ১ হাজার ২৬২টি শহরভিত্তিক। অধিকাংশ শাখাগুলোর গ্রাহকেরা আধুনকি সেবা থেকে বঞ্চিত।
এদিকে সামপ্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পরিবার ব্যাংকিং সুবিধা পায়। বাংলাদেশে যেখানে ব্যাংক শাখা প্রতি জনসংখ্যা ২১ হাজার ৬৫, সেখানে ভারতে ১৪ হাজার ৪৪৮ এবং পাকিস্তানে ২০ হাজার ৩৪০ জন। অর্থনৈতিক সেবা বিস্তৃত করতে গ্রাম ও শহরে সমভাবে ব্যাংক শাখা খোলার পাশাপাশি আধুনিক সেবা দেওয়া প্রয়োজন। তবে সরকারি ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে নতুন শাখা খোলায় গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যাংক শাখার বিদ্যমান ব্যবধান কিছুটা লাঘব হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির ভিত কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণে গ্রামাঞ্চলে শাখা খুললেও প্রতিটির পেছনে পরিচালনাগত খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিপুলভাবে এগিয়ে আসতে পারছে না।
এদিকে, মোবাইল ব্যাংকিং করার জন্য লাইসেন্স নিয়েছে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সে দুটি হলো সোনালী ও জনতা ব্যাংক। দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও এ দুটি ব্যাংকের একটিও মোবাইল ব্যাংকিং চালু করতে পারেনি।
সূত্র মতে, মোবাইল ব্যাংকিং মূলত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধাযুক্ত সেবার নাম। এর মাধ্যমে নগদ অর্থ উত্তোলন, জমা দান, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও উপযোগ সেবার বিল প্রদান, বেতন উত্তোলন, প্রবাসী আয় প্রেরণ ও গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও অনুদান গ্রহণ প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে মোবাইল ফোন থেকেই। নির্দিষ্ট ব্যাংক কোনো মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করলে সেই মোবাইল অপারেটর ও ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং সেন্টারে গিয়ে সহজেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটররা ইউনিয়ন পর্যায়েও তাদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় তাই ইউনিয়ন পর্যায়েও কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা দৈনন্দিন নানান কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মূল লক্ষ্যই হলো জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং জীবনযাপন সহজ করা।
এ প্রসঙ্গে গ্রাহকরা বলেন, আধুনিক সেবা থেকে গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার ব্যাংক থেকে অধিক মুনাফা হারাচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারী ব্যাংক থেকে প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে সরকারি ব্যাংক। গ্রাহকরা মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের যে জনপ্রিয়তা রয়েছে, সে হারে সেবার মান নিশ্চিত করতে পারলে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সরকারও ব্যাপক অর্থ পেত। সেই সঙ্গে গ্রাহকরাও সুবিধা ভোগ করতে পারত।
সূত্র: দৈনিক যায় যায় দিন, ১৭ নভেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন