৫২ জনের বিরুদ্ধে ১২ মামলা

দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতাসহ পাঁচ ব্যাংক থেকে প্রায় ১২শ' কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও ব্যাংকের মোট ৫২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার সংস্থার পাঁচ কর্মকর্তা বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল, রমনা ও নিউমার্কেট থানায় আলাদাভাবে মামলাগুলো দায়ের করেন। দু'জন প্রভাবশালী পরিচালকের (পেইড ডিরেক্টর) নাম বাদ রেখে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
৫২ জনের বিরুদ্ধে ১২ মামলাদুদক জানায়, ১২ মামলায় ৫৩ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১৩ ও ব্যাংকের ৪০ জন। পাঁচটি ব্যাংক হলো_ জনতা, প্রাইম, প্রিমিয়ার, যমুনা ও শাহ্জালাল ব্যাংক। গতকাল বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে ওই ১২টি মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন অনুসন্ধান টিমের প্রধান উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জনসংযোগ বিভাগের প্রধান উপ-পরিচালক প্রণব ভট্টাচার্য।
 
গত ৩০ অক্টোবর কমিশন সভায় ১২ মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয়। একজন কর্মকর্তাকে দুটি মামলায় আসামি করায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩ জন। সৈয়দ ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতারণা, দুর্নীতির মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি করে রফতানির নামে পাঁচ ব্যাংক থেকে ১,১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা লোপাট করা হয়। এর মধ্যে ফান্ডেড ৯৯০ কোটি ৩ লাখ ও নন-ফান্ডেড ১৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পাঁচ ব্যাংকের ৮টি শাখা থেকে ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
সন্দেহজনক দু'জন পরিচালকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে তাদের অভিযুক্ত করা হলো না কেন_ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইকবাল বলেন, তাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হয়েছে। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে তাদের নাম পাওয়া যায়নি। তারা ওই গ্রুপের পরিচালক ছিলেন না। তবে তারা পরিচালক হিসেবে গ্রুপ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তাদের পেইড ডিরেক্টর বলা যায়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার অভিযোগ তদন্ত হবে।
 
তদন্ত পর্যায়ে ওই দুই জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ২টি ও নিউমার্কেট থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ২টি, সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ১টি, রমনা থানায় ১টি, উপ-সহকারী পরিচালক সরদার মঞ্জুর আহমেদ বাদী হয়ে রমনা থানায় ২টি ও উপ-সহকারী পরিচাপলক আল-আমিন বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ৩টি মামলা দায়ের করেন।
বিসমিল্লাহ গ্রুপ :বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ১৩ আসামির মধ্যে ৭ জন পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। তারা হলেন_ গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান চৌধুরী, চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী মিসেস নওরীন হাসিব, পরিচালক ও এমডির বাবা শফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, মা বেগম সারোয়ার জাহান, বোন নাহিদ আনোয়ার, পরিচালক ও এমডির শাশুড়ি আবিদা হাসিব ও শ্যালক মঈনউদ্দিন মো. ইসহাক। গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ আসামি হলেন_ ডিএমডি আকবর আজিজ মোত্তাকি, জিএম আবুল হোসেন চৌধুরী, ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন সফি, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেমের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মঈনুদ্দিন, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান বে-ইয়ার্ন লিমিটেডের মালিক গোলাম মহিউদ্দিন।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ০৪ নভেম্বর, ২০১৩

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন