ক্যামেলসে উন্নতি ছাড়া ব্যাংকের এমডির বেতন বাড়বে না

ব্যাংক কোম্পানি আইন (সংশোধনী), ২০১৩ অনুযায়ী গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নিয়োগ এবং তাদের দায়দায়িত্বের বিধানসংবলিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংকের প্রধান আর্থিক সূচক ক্যামেলস রেটিংয়ে উন্নতি না হলে প্রধান নির্বাহী বা এমডির বার্ষিক বেতন বাড়ানো যাবে না। আগের বিধান অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির সুবিধা ছিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় ও আমানতকারীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম দায়িত্ব। সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য প্রধান নির্বাহীর দায়দায়িত্ব ও ক্ষমতা বিভাজনের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
প্রধান নির্বাহী পদে নিয়োগের জন্য ১৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা এবং প্রধান নির্বাহীর পূর্ববর্তী পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোনো কোম্পানির চেয়ারম্যান বা পরিচালক অথবা কর্মচারী থাকাকালে বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তি প্রধান নির্বাহী হওয়ার যোগ্য হবেন না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা ওই ব্যাংকে ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত আছে, এমন কেউ প্রধান নির্বাহী পদে যোগ্য হবেন না। পাওনাদারদের প্রাপ্য পরিশোধ বন্ধ করেননি কিংবা পাওনাদারদের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় হতে অব্যাহতি লাভ করেননি এমন আর্থিক স্বচ্ছতা থাকতে হবে প্রধান নির্বাহী পদে আগ্রহীদের।
প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতাদি নির্ধারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা, ব্যবসার পরিমাণ ও উপার্জন ক্ষমতা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা ও অতীত কর্মসফলতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা, সমপর্যায়ের অন্য ব্যাংকের একই পদে নিযুক্ত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি বিবেচনায় আনতে হবে। ব্যাংকের প্রধান আর্থিক সূচক ক্যামেলস রেটিংয়ে উন্নতি ছাড়া প্রধান নির্বাহীর বার্ষিক বেতন বাড়ানো যাবে না। চাকরির শর্তে উল্লিখিত মেয়াদকালে বেতন-ভাতাদির শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না, নবায়নের ক্ষেত্রে কর্ম-উত্কর্ষ বিবেচনায় বেতন পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করা যাবে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংককে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিধান মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন করে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা এখন থেকেই ব্যাংকগুলোকে মেনে চলতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন আরো উন্নতি ঘটবে।
নিজ ব্যাংকে উপদেষ্টা হতে নিষেধাজ্ঞা: অনুযায়ী ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় একই ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে অন্য ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে কোনো বাধা নেই। এছাড়া ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে, এমন কেউও ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে পারবেন না। অবসর বা অব্যাহতির এক বছর পর পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য কোনো কর্মকর্তা উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হতে পারবেন। ব্যাংকের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। এছাড়া ট্যাক্স, আইন ও মামলা, প্রকৌশল ও কারিগরি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিশেষায়িত কাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক নিয়োগেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
উপদেষ্টা নিয়োগ পাবেন এক বছরের জন্য। তবে মূল্যায়ন সাপেক্ষে পুনর্নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। কার্যপরিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাবেন দুই বছরের জন্য, যা পুনর্নিয়োগযোগ্য নয়। তবে অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এক বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হয়েছে। উপদেষ্টা থোক পারিশ্রমিক, যানবাহন ও টেলিফোন সুবিধা ব্যতীত ব্যাংক থেকে অন্য কোনো সুবিধা পাবেন না। পরামর্শকও মাসিক কিংবা থোক পারিশ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না।
করতে হবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি: ঝুঁকি মোকাবেলায় সব ব্যাংককে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কমিটি ঝুঁকি ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধারণ করবে। একই সঙ্গে নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নীতি নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান সুচারুরূপে সম্পন্ন করা তথা সুশাসন নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পরিচালনা পর্ষদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য বা ব্যর্থতার বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনা বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য কর্মপন্থা ও কৌশল সম্পর্কে পর্ষদের সুপারিশ শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করবে। পর্ষদ প্রধান নির্বাহী ও তদস্থ দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের মূল্য কর্মসম্পাদন নির্দেশক নিরূপণ করবে ও সময় সময় মূল্যায়ন করবে। পর্ষদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন ও অবলম্বন এবং তা যথাযথ অনুসরণ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করবে।
পর্ষদের প্রণীত কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্ভূত ও সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি ঝুঁকি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল, সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতি পযাঁলোচনা ও অনুমোদন, তথ্য সংরক্ষণ ও রির্পোটিং, সার্বিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতির বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করবে।
(সূত্র: দৈনিক বণিকবার্তা, তারিখ: ২৮-১০-২০১৩)

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন