প্রণোদনা বহাল রাখার কথা ভাবছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনীতির অবস্থা সন্তোষজনক হলে মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ক্রয়ের প্রণোদনা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড)। তবে সম্প্রতি সরকারের শাটডাউনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। এতে ফেডের প্রণোদনা বহাল থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগামীকাল মঙ্গলবার ও পর দিন ফেডের নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খবর এএফপি ও ব্লুমবার্গের। শাটডাউনের ফলে কমপক্ষে ২৫ বিলিয়ন ডলারের উত্পাদন কম হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশের সমান। এ ছাড়াও শাটডাউনের সময় সরকারের পরিসংখ্যান কর্মীদের কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমপরিস্থিতির মতো অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময়সীমা পিছিয়ে যায়। শাটডাউনের পর তারা কাজ শুরু করলেও বিশ্লেষকদের অনেকেই এ সময়ে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের ওপর ভরসা পাচ্ছেন না। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহজ মুদ্রানীতি ও অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার ফলে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে উত্পাদন ও ভোগ বাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে ফেড চেয়ারম্যান বেন বারনানকে প্রতি মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ক্রয় কর্মসূচির একটি এক্সিট রুট খোঁজার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। সে সময় তিনি বলেন, অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তি ফিরে পেয়েছে, এমনটি নিশ্চিত হলে বাড়তি ডলার ছাপানো ও তা দিয়ে ট্রেজারি (সরকারি) বন্ড কেনা কমিয়ে আনা শুরু হবে। তারা মূলত শ্রমবাজারের পরিসংখ্যানের ওপরই নির্ভর করছেন অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্য। তার আভাসের সঙ্গে অর্থনীতির সার্বিক চিত্র মিলিয়ে বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন ১৮ সেপ্টেম্বরের সভা শেষেই প্রণোদনা কমিয়ে আনার ঘোষণা আসবে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রণোদনা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ফেড। এ সময় উদীয়মান দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারেও মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এরপর বাজেট ও ঋণসীমার সমস্যায় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় নতুন করে। ঋণসীমার দোলাচলে আন্তর্জাতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটি। সেপ্টেম্বরে উড়োজাহাজ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সব ধরনের পণ্যের ক্রয় আদেশ কমেছে। কর্মসংস্থান আশানুরূপ বাড়েনি। শুক্রবার প্রকাশিত মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা আস্থা সূচকটি জানুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। নৈরাশ্য বেড়েছে ভোক্তা ও নিয়োগদাতাদের মধ্যে। প্যানথন ম্যাক্রো ইকোনমিকসের গবেষক ইয়ান শেফার্ডসন মনে করছেন, এ রকম একটি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির সদস্যরা প্রণোদনা উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না। তাছাড়া অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষে কতটা ভালো করছে, এ চিত্রও এখন স্পষ্ট নয়।তার মতে, ডিসেম্বরের আগে প্রণোদনা কমানোর সম্ভাবনা নেই। বারনানকের মেয়াদে প্রণোদনা বহাল থাকছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে ফেডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বর্তমান চেয়ারম্যানের সহকারী জ্যানেট ইয়েলেন। তিনি বলেন, মার্চে একটি সম্ভাবনা থাকলেও জুনের ওপরই বাজিটি ধরতে চাই আমি।কেবল ডয়েচে ব্যাংক ছাড়া বিভিন্ন সাক্ষাত্কারে মতামত দেয়া প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষকদের প্রায় সবাই মনে করছেন, ২০১৪ সালের শুরুর কয়েক মাসেও প্রণোদনা বহাল থাকবে। শেয়ারবাজারের পাশাপাশি মুদ্রা ও বন্ডবাজারেও প্রণোদনা বহাল থাকা নিয়ে আশাবাদ বেড়েছে। সহজ ডলারের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে, এমন প্রত্যাশায় ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। অস্ট্রেলীয় ডলার, ইয়েন, কিউই ডলার এবং সুইস ফ্র্যাঁ কিংবা সুইডিশ ক্রোনার মতে ইউরোপীয় মুদ্রাগুলোর বিপরীতে কমেছে ডলারের বিনিময় হার। এদিকে, বন্ডবাজারে মার্কিন সরকারি বন্ডগুলোর ইল্ড বেড়েছে। করপোরেট বন্ডগুলোর সঙ্গে ট্রেজারি বন্ডের ইল্ডের ব্যবধানও কমে এসেছে কিছুটা। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের ঋণের ঊর্ধ্বসীমা অনুমোদন করে আইনসভা কংগ্রেস। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করে যায় অর্থ দফতরের মোট দেনা। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরে প্রেসিডেন্ট ওবামার স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় পরিকল্পনা অন্তত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়ার দাবিতে এ ঋণসীমা বাড়াতে অসম্মতি জানায় বিরোধী রিপাবলিকানরা। ১৬ দিন ধরে বন্ধ থাকে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সেবা। বিনা বেতনে ছুটিতে যেতে বাধ্য হয় সাত থেকে আট লাখ কর্মী। পরবর্তীতে ডেমোক্র্যাটদের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় করে যাওয়ার মতো অর্থ ধার করার অনুমতি দেয় আইনসভা। 
সূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন