রাবারের গুরুত্ব বাড়ছে

শাহ আলম খান
কোনো ধরনের পরিচর্যা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই এতোদিন দেশে প্রাকৃতিক রাবারের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ব্যবহার এবং রফতানি কার্যক্রম চলে আসছে বিশেষ এলাকাভেদে কার্যক্রম সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে হলেও সেটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই চলছে এতে ছিল না কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা গবেষণামূলক কার্যক্রমও তবু দেশে প্রাকৃতিক রাবারের চাষ উৎপাদন কার্যক্রমে নীরবেই ঘটতে যাচ্ছে আশাতীত বিপ্লব খাতটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, রাবার একটি মূল্যবান অর্থকরী কৃষিজ পণ্য হলেও সরকারের অর্থকরী ফসলের তালিকায় এর নাম নেই বিস্ময়কর হল সরকারের অনেক বড় বড় কর্মকর্তাসহ দেশের অধিকাংশ নাগরিকেরই খাত সম্পর্কে তেমনভাবে জানাশোনা নেই অথচ বেসরকারি উদ্যোগে হলেও খাতটি এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ তারা মনে করছেন, রাবারশিল্পে বিদ্যমান এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে দেশের বর্তমান রাবার চাষে আওতাভুক্ত জমি থেকেই এর উৎপাদন বর্তমান সক্ষমতার চেয়ে আরও ৩০ শতাংশ বেশি হত যদিও বর্তমান উৎপাদন দিয়েই দেশের পুরো চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে এই খাতটি শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত প্রাকৃতিক রাবার রাবার থেকে প্রক্রিয়াকৃত পণ্য বিদেশে রফতানি করেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে সম্প্রতি খাতটির ব্যাপকভিত্তিক সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্যোক্তারা নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন কারণ সম্প্রতি প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত হচ্ছে আধুনিক প্রক্রিয়া সরকারের সহযোগিতা বর্তমানে উৎপাদিত রাবার দেশের সামগ্রিক চাহিদার পুরোটাই মেটাতে সক্ষম হচ্ছে পাশাপাশি রফতানির হারও বাড়ছে বছর বছর ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ধীন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী গত (২০০৯-১০) অর্থবছরে রাবার রফতানির মাধ্যমে প্রায় কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে দেশ যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই রফতানির হার ব্যাপকভাবে বেড়ে কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায় চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাকৃতিক রাবার রাবার থেকে প্রক্রিয়াকৃতসামগ্রী রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ডলার এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রথম প্রান্তিকে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য রয়েছে ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার যদিও সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিদ্যমান প্রতিকূলতার কারণে ত্রৈমাসিকে বা প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সামান্য কমে প্রায় ২৯ লাখ মার্কিন ডলার রফতানি করা গেছে তবে রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় .৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে
ওদিকে জানা গেছে, দেশে প্রাকৃতিক রাবারের চাষ বৃদ্ধি, জমির সম্প্রসারণ, উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণসহ নীতিগত সহায়তা দিতে সরকার এরই মধ্যেরাবার নীতিমালাপ্রণয়ন করেছে। এখন শিল্পটির সুষ্ঠু পরিচালনায় রাবার বোর্ড গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সঙ্গতকারণেই উদ্যোক্তারা রাবার শিল্পের উন্নয়ন সম্প্রসারণে অনেকেই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। ব্যাপারে বাংলাদেশ বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মোট ৯২ হাজার ৯৩৫ একর প্রাকৃতিক রাবার বাগান থেকে বার্ষিক রাবারের উৎপাদনের পরিমাণ ১২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। তবে বর্তমান হারের রাবার উৎপাদনকে উদ্যোক্তারা শিগগিরই দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর জন্য সব ধরনের পরিকল্পিত কর্মপন্থাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কর্মপন্থাকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আগামী ২০১৫ সাল নাগাদ বর্তমান রাবার উৎপাদনকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৩১০ মেট্রিক টনে এবং ২০২০ সাল নাগাদ তা ২৬ হাজার ৮০ মেট্রিক টনে উন্নিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাবার উদ্যোক্তারা।
তবে বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ব্যক্তি খাতে বাগান মালিকরা নতুন জমি সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে ২০ সাল নাগাদ রাবার উৎপাদন বর্তমান উৎপাদন থেকে আরও তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এদিকে প্রতিনিয়তই বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক রাবারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। সূত্র মতে, বিপুল চাহিদাসম্পন্ন প্রাকৃতিক রাবারের উৎপাদনের ৯৪ শতাংশ উৎপাদন হয় এশিয়া মহাদেশে। তবে এর ৭২ শতাংশই উৎপাদিত হয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ডে। তবে উদ্যোক্তারা জানান, অবহেলায় পড়ে থাকলেও বাংলাদেশও প্রতিযোগিতায় খুব একটা পিছিয়ে নেই। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত রাবার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পরিকল্পিত ছকে এগিয়ে যেতে পারলে পরিবেশবান্ধব রাবার চাষের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাবারভিত্তিক শিল্প উৎপাদনের সুযোগও সৃষ্টি হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে ব্যক্তি খাতে রাবার বাগান রয়েছে মোট ৩২ হাজার ৫০০ একর। এর থেকে বার্ষিক রাবার উৎপাদন হয় হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এছাড়া বিএফআইডিসির অধীনে রাবার বাগানের পরিমাণ ৩২ হাজার ৬৩৫ একর, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১২ হাজার একর, ডানকান ব্রাদার্সের অধীনে হাজার ৫০০ একর, জেমস ফিনলের হাজার একর, মেসার্স রাগীব আলীর হাজার ৫০০ একর ইস্পাহানি নেপচুন গার্ডেনের অধীনে রাবার বাগানের পরিমাণ ৮০০ একর। এসব বাগান থেকে বার্ষিক রাবার উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে হাজার ৯০ মেট্রিক টন, হাজার ১৫০ মেট্রিক টন, ৮৫০ মেট্রিক টন, ৫৫০ মেট্রিক টন, ৪৩০ মেট্রিক টন ৮০ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন রাবারশিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলেন, অভ্যন্তরীণ বিশ্ব অর্থনীতিতে রাবার জাতীয় পণ্যের গুরুত্ব বিশ্ব বাজারে ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রাবার রাবার জাতীয় পণ্যের দামও। ফলে রাবার বাগান উন্নয়ন সম্প্রসারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
তিনি জানান, বিশ্বে প্রায় ২৫ হাজার ধরনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে রাবারের উপস্থিতি আছে। বিদেশে এসব দ্রব্যভিত্তিক শিল্পও ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠছে। তবে বাংলাদেশে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার আইটেমের রাবারদ্রব্য উৎপাদিত হচ্ছে। তার মতে, এদেশেও রাবার উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর ভ্যালু এডিশন নিত্যনতুন রাবার দব্যসামগ্রী উৎপাদন বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। দরকার শুধু রাবারভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণে সরকারি বেসরকারি সমান্বত উদ্যোগ গ্রহণ।

সূত্র: দৈনিক সমকাল

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন