পুঁজিবাজার নয়, গুরুত্ব পাবে ব্যাংকিং খাত

বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজারে জোর দেয়ার চেয়ে ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করাই বেশি ভাল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ নূরুল ইসলাম। একই মত দেন অধ্যাপক অমিও কুমার বাগচীও। বলেন, ব্যাংক আর পুঁজিবাজার একসঙ্গে, এক মাঠে খেলতে পারে না। পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক সঙ্কটের অন্যতম কারণ ব্যাংক আর পুঁজিবাজার এক মাঠে খেলা করে। সোমবার রাতে চতুর্দশ ‘নূরুল মতিন স্মারক’ বক্তৃতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান যে গতি-প্রকৃতি তাতে পুঁজিবাজারকে উৎসাহিত করার চেয়ে ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করা বেশি জরুরি। রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) ভবনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যাতে স্মারক বক্তৃতা পাঠ করেন ভারতের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতার এমিরেটস অধ্যাপক অমিও কুমার বাগচী। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আতিউর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যহসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, অর্থায়ন উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। উৎপাদনশীল খাতকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দিতে হলে ব্যাংক ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে। সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারকে উৎসাহিত করা ঠিক হবে না। এ ধরনের অর্থায়ন ব্যবস্থা পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপে হয়েছে এবং সেসব দেশ এগিয়েছে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো প্রণয়নের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত থাকা নূরুল ইসলাম শুরুর দিকেই বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মাঝে-মাঝে বাংলাদেশে আসেন। স্মারক বক্তৃতায়ও তার সুরেই কথা বলেন অধ্যাপক অমিয় কুমার বাগচী।  তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে উৎপাদনশীল খাতে অর্থায়ন হতে হবে। এজন্য ব্যাংকই সেরা উপায়। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকারের দু’টো বিষয়ে বিশেষ নৈতিকতা (ইথিকস) থাকতে হবে। বিশেষ করে কাকে ঋণ দেয়া হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে বিবেচনা করা এবং একইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকা। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে নৈতিকতার জন্য কোন ব্যাংকারকে যেন জীবন দিতে বাধ্য না করা হয়। সেজন্য একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা করতে হবে। টাকাওয়ালারা যেন সব কিনে ফেলতে না পারে। সাবেক এ ব্যাংকার বলেন, প্রত্যেকটি দেশের একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর দরকার আছে। ব্যাংক আর পুঁজিবাজার একসঙ্গে, এক মাঠে খেলতে পারে না। এটা করাও ঠিক হবে না। পশ্চিমা  দেশগুলোর আর্থিক সঙ্কটের অন্যতম কারণ ব্যাংক আর পুঁজিবাজার এক মাঠে খেলা করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বক্তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। গভর্নর বলেন, আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার কারণেই বৈশ্বিক মন্দা থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছি। আগামীতে এসব বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকব। সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ১২ নভেম্বর ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন