রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ে সুখবর নেই। প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনোটাই অর্জিত হয়নি। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৯৬৫ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমান ছিল ৯৭৪ কোটি ৭১ লাখ ডলার।
গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৯৬৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় আলোচ্য সময়ের এক হাজার ৪৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সােড় ৭ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণেই মূলত সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে পোশাক খাতের (নিট ও ওভেন) রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৭৭৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এই আয় মোট পণ্য রপ্তানির ৮০ দশমিক ৩১ শতাংশ। পোশাকশিল্পের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম।
আলোচ্য সময়ে নিট পোশাক থেকে সর্বোচ্চ ৪০৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩৬৯ কোটি ডলার। নিটে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ওভেনে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে।
এদিকে পোশাক খাতের ভালো প্রবৃদ্ধি না থাকলেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম ও গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এই খাতের মোট আয়ের মধ্যে চামড়া থেকে ১৪ কোটি, চামড়াজাত পণ্যে সাত কোটি এবং পাদুকা থেকে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার এসেছে।
অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যে ২৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য ৮০ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যে ২৪ কোটি, কৃষিজাত পণ্যে ২৩ কোটি, হোম টেক্সটাইলে ২৩ কোটি ৫৬ লাখ, বাইসাইকেলে চার কোটি ২৯ লাখ, প্লাস্টিকে তিন কোটি ৬৪ লাখ, প্রকৌশল পণ্যে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
সর্বশেষ অক্টোবর মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ১৯৫ কোটি ডলার; যা এই সময়ের ২৪৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। আর গত সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ২৫৫ কোটি ডলার।
এদিকে পোশাক খাতের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিকে সাময়িক বলছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের মতে, গত জুন-জুলাইয়ের পর কার্যাদেশ কিছুটা কম থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন আবার কার্যাদেশ পাচ্ছেন কারখানার মালিকেরা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শন কার্যক্রম চলার কারণে ক্রেতারা কিছুটা হাত গুটিয়েছিলেন। এখন পরিদর্শন একটা পর্যায়ে পৌঁছার পর দেখা যাচ্ছে, মাত্র ২ শতাংশ কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ক্রেতারা আবার ফিরছেন। প্রচুর অর্ডার বা ক্রয়াদেশ আসছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এর প্রতিফলন পাওয়া যাবে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি খাতের মোট আয় দাঁড়িয়েছিল তিন হাজার ১৮ কোটি ডলার। সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য সার্বিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তিন হাজার ৩২০ কোটি ডলার। সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ১১ নভেম্বর ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন