ন্যাশনাল ব্যাংকের অস্বাভাবিক ঋণ পুনঃতফসিল

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ প্রচলিত নীতিমালার পরিবর্তে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগে পুরনো অনেক খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। এতে তিন মাসেই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলের এ গতিকে অস্বাভাবিক বলছেন ব্যাংকাররা।
জানা গেছে, পুরনো খেলাপি গ্রাহক নুরজাহান গ্রুপ, সিদ্দিক ট্রেডার্স, জিএমজি এয়ারলাইনস, মাস্টার্ড ট্রেডিং, মারিন ভেজিটেবলসহ বেশ কয়েকটি বড় গ্রাহকের ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। যদিও এর কোনোটিই চলমান অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত নয়। এসব ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের প্রচলিত নীতিমালাও অনুসরণ করা হয়নি।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) বদিউল আলম বলেন, ঋণ আদায় না হওয়ায় মামলার কারণে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তবে নগদ আদায় ও নিয়মানুযায়ী পুনঃতফসিল করার কারণে খেলাপি ঋণ কমে গেছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তারা ঋণ শোধ করছেন। এ কারণে মামলাও তুলে নেয়া হচ্ছে। নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রস্তুত করা বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩২ কোটি ৫ লাখ টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অথচ সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। ফলে সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির ৪০১ কোটি সঞ্চিতি ঘাটতি থাকলেও ডিসেম্বর শেষে ৪ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত দেখানো হচ্ছে।
তথ্যমতে, ২০১২ সালের মার্চে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। জুন শেষে এ হার দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯৯, সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ৮৭ ও ডিসেম্বরে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৪ দশমিক শূন্য ২, জুনে ১৩ দশমিক ৭৩ ও সেপ্টেম্বরে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করায় ডিসেম্বর শেষে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ হ্রাস পাওয়ার হার প্রায় ৮২  শতাংশ।
জানা গেছে, অর্থঋণ আদালতে দায়ের মামলা প্রত্যাহার করেও অনেক ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে। এছাড়া আদায় অযোগ্য ঋণও ডাউন পেমেন্ট ছাড়া নিয়মিত করা হয়েছে। এভাবে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমিয়েছে ব্যাংকটি।
এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ পুনঃতফসিলের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ-সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়েছে। এসব নথির মধ্যে আছে নুরজাহান গ্রুপ, সিদ্দিক ট্রেডার্স ও জিএমজি এয়ারলাইনসের নামে চলতি হিসাব খোলার ফরম, ট্রেড লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও হিসাব বিবরণী। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের আবেদন, শাখার প্রস্তাব ও ক্রেডিট কমিটি অথবা পর্ষদের অনুমোদনসংক্রান্ত রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক বণিকবার্তা, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন