আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ঋণ বিতরণ বেড়েছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ ভর্তুকির আওতায় আমদানি বিকল্প ফসলে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ৪% সুদে এ খাতে বিতরণ করেছে ৩৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে একই সময়ের তুলনায় বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৩৮%। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ৪% রেয়াতি সুদে মসলা, তৈলবীজসহ আমদানি করতে হয় এমন পণ্য চাষে এ ঋণ দেয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত ২৬ বাণিজ্যিক ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আমদানি বিকল্প ফসলের আওতায় বিভিন্ন ধরনের মসলা, ডাল, তেলবীজ ও ভুট্টা চাষে ব্যাংকগুলোর জন্য চলতি অর্থবছর ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিতরণ করা হয়েছে ৩৪ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৮.৩৭%। গত অর্থবছরে ৭৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ সময়ে বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। বিদেশী ব্যাংকগুলো দিয়েছে এক কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক ৫ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৮ কোটি ২০ লাখ ৪১ হাজার, সোনালী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮৫ হাজার, রূপালী ৪২ লাখ, অগ্রণী ৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো এ খাতে মোট ৮১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করে। মসলা চাষে বিশেষ এই ঋণ প্রবাহের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক জানান, ‘২০১০ সালের শেষ দিকে পিয়াঁজ রসুন, মরিচ, আদাসহ সব ধরনের মসলা জাতীয় নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এসব খাতে কৃষকদের ঋণ দিয়ে মসলা জাতীয় ফসল চাষে উৎসাহী করে তোলা হবে।’ তিনি বলেন, প্রথমে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ করলেও গত অর্থবছর থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এ খাতে ঋণ বিতরণ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি এ খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর ফলে আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। বছর শেষে ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য সরকারের সুদ ক্ষতিপূরণ সুবিধার আওতায় ডাল জাতীয় ফসল মাষকলাই, মুগ, মসুর, খেসারি, ছোলা, মটর ও অড়হর; তেলবীজ জাতীয় ফসল সরিষা, তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী ও সয়াবিন; মসলা জাতীয় ফসল- হলুদ, আদা, রসুন, পিয়াজ ও ধনিয়া এবং ভুট্টা চাষে এ ঋণ দেয়া হয়। গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাংকগুলো ৪ শতাংশ সুদ নেয়। বাকি ৬ শতাংশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংক মোট ১০ শতাংশ সুদ পায়। সে ক্ষেত্রে সুদ ক্ষতি বাবদ প্রদত্ত ছয় শতাংশ হিসেবে নেয়ার পরও কোনও ব্যাংকের কিছুটা সুদ ক্ষতি হলে ওই অংশটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) আওতায় গণ্য করা হয়। 
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন