বিশ্বের দুর্ধর্ষ ৬ গোয়েন্দা সংস্থা

আভ্যন্তরীণ ও রাষ্ট্রীয নিরাপত্তা রক্ষায গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্ব অত্যাধিক। দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যে স্বাধীন দেশগুলোর রয়েছে এক বা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। যাদের কাজ মুলত দেশের ভেতরে, বাইরে দেশের স্বার্থ সংলিষ্ট বিষয় সমুহে নজরদারি করা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিহত করা, দেশে এবং বিদেশে অবস্থিত কুটনৈতিক তৎপরতার প্রতি নজর রাখা। প্রতিটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা থাকলেও বর্তমান বিশ্বে সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থা সমান ভাবে শক্তিশালী নয়। অনেক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে বেশ আলোচিত আবার কোনগুলো সম্পর্কে আমরা তেমন জানিনা বললেই চলে । ২০১৩ সালের সেরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ৬ টি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হল -
১. CIA (Central Intelligence Agency) USA: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কয়েক মাইল পশ্চিমে ভার্জিনিয়াতে  ন্যাশনাল সিকিউরিটির আইনের আওতায় সেপ্টেম্বর ১৮, ১৯৪৭ সালে CIA গঠিত হয় । CIA বর্তমান ডিরেক্টর জন ও. ব্রেনান।পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং তুখোর এ গোয়েন্দা সংস্থা যেন অ্যামেরিকার ভেতরে আরেক অ্যামেরিকা, যারা শুধু নিজ দেশের উপরেই নজর রাখছেনা, রাখছে পুরো বিশ্বের উপরেই।  তবে সি আই এ শক্তিশালী হলেও যে ব্যার্থ নয় তা বলা যাবেনা। সি আই এ ব্যার্থ হয়েছে ৯/১১ এর বিমান হামলা প্রতিরোধে, আল কায়েদার শির্ষ একজন নেতাকেউ গ্রেফতার করতে পারেনি, আফগানিস্থানে ১০ লাখ সোভিয়েত সৈন্যের আগমন সম্পর্ক কোনো তথ্যই পায়নি, ইরাকে সাদ্দাম সরকারের ব্যাপক বিধ্বংসি অস্ত্র প্রমান করতে ব্যার্থ হয়েছে। সিআইএ এততটাই গোপন ও তীক্ষ্ণভাবে কাজ করে যে এদের কার্যক্রম সম্বন্ধে সবরকম অনুমানই প্রায় অসাধ্য।এ বিষয়ে একবার প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন বলেছিলেন সি আই এ কি করে তা আসলে কেউ ই জানেনা। প্রজুক্তির দিক থেকে সিআইএ সবার সবগুলো গোয়েন্দাসংস্থা থেকে এগিয়ে। লোকে মুখে প্রচারিত থাকে সি আই এ এমন সব গোপন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে যা এখন পর্যন্ত দুনিয়ার কেউ জানেনা।
২. MI6 (Military Intelligence Section 6) England: ১৯০৯ সালে এটি গঠিত হয় ।লন্ডনের থেমস নদীর তীরে ভক্সহল ব্রিজের পাশে ভক্সহল ক্রসে এর হেডকোয়ার্টার। পূর্বে এর হেডকোয়ার্টার ছিল ১০০ ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজ রোডের সেঞ্চুরি হাউজে।  এর বর্তমান ডিরেক্টর স্যার জন স্যাওয়ারসজেমস বন্ডের মুভিগুলো হয়ত সবার ই দেখা। এজেন্ট ০০৭ যে কিনা ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সি এম আই সিক্সের দুর্র্ধষ স্পাই জীবনের ঝুকি নিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকে। হয়ত বাস্তবে কোনো জেমস বন্ড নেই তবে এম আই সিক্স আছে। আম আই সিক্স ব্রিটিশ মিলিটারির ইন্টেলিজেন্স এর একটি বিশেষায়িত শাখা। এম আই সিক্স অনেকটা সি আই এর মত। শোনা যায় এম আই সিক্স রাশিয়ার সুপারসনিক বিমান TU-১৪৪ চুরি করতে স্যাবোট্যাজ ঘটিয়েছিল।
৩. Mossad , Israel: এটি গঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এই সংস্থা মুলত পারস্পারিক সহযোগীতা সংস্থা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বর্তমান প্রধান তামির পারদো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রির দফতরই এর হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোসাদ কে বলা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে দুর্র্ধষ গোয়েন্দা সংস্থা। ধারনা করা হয় পৃথিবীর এমন কোন যায়গা নেই যেখানে মোসাদ অপারেশন চালাতে পারেনা। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, গোপন কার্যক্রম চালানো, আধাসামরিক অভিযান পরিচালনা করা তদপুরি ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো কিছু করাই এর প্রধান কাজ। মোসাদ ফিলিস্তিনের  পি এল ও সদস্যদের উৎখাতে ভুমিকা পালন করেছিল যখন ১৯৭২ সালের জার্মানীর মিউনিখ অলিম্পিকে এগারো জন ইসরায়েলি এথলেট কে হত্যা করা হয়েছিল। মোসাদ মিগ-২১ বিমানের কারনে মাত্র ছয় দিনে আরবদের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করতে ভুমিকা রাখে যা সংগঠিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এছাড়াও তারা ফ্রান্সের তৈরি মিরেগ-৫ বিমান চুরি করে আনে যখন এই বিমান ক্রয়ের চুক্তি ভন্ডুল হয়ে যায়। মোসাদের কার্যক্রম নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। তারা গুপ্তহত্যায় পারদর্শি। তারা বিভিন্ন সময় গুপ্তহত্যা ঘটিয়েছে এবং প্রমানিত হওয়ার পরও দোষ স্বীকার করেনি। কথিত আছে পি এল ওর জনপ্রিয় নেতা ইয়াসির আরাফাত কে তারাই বিষ প্রয়োগে হত্যা করে।
৪. MSS. China (Ministry of State Security): বেইজিং এ এর হেডকোয়ার্টার অবস্থিতি। এমএসএস এর বর্তমান ডিরেক্টর গ্যাং হুচ্যাং ২০০৭ সাল থেকে বহাল রয়েছেন। এম এস এস চায়নার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধিনে রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা। এটা চীনের সবচেয়ে বড় এবং আ্যক্টিভ গোয়েন্দা সংস্থা হলেও এরা বহির্বিশ্বে নিজেদের শক্তিশালী সক্ষমতা প্রমান করতে পেরেছে। সাধারন পুলিশের মতই ক্ষমতা রয়েছে এদের। এরা অপরাধী কে বা সন্দেহভাজন কোন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করার এবং রিমান্ডে নেয়ার ক্ষমতা রাখে। এম এস এস মূলত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান এ নিয়োজিত থাকে এবং বিদেশি স্পাইদের কর্মকান্ড ভন্ডুল করে দিয়ে থাকে যদি তারা চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে ঝুকির মধ্যে ফেলে। এম এস এস প্রাথমিক কাজ হল বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ । এম এস এসর প্রায় ১২০ জন এজেন্ট নন-অফিসিয়াল ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং ইউরোপিয়ান দেশ গুলোতে তাদের এজেন্টদের কাভার হিসেবে কাজ করছে। এদের বেশিরভাগ ই ব্যাবসায়ি, সাংবাদিক, সমাজসেবক, ব্যাংকার হিসেবে ছদ্দবেশে রয়েছে। এর সদস্যদেরকে বেইজিং এ অবস্থিত(১৯৪৯) ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স(ইউআইআর) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এমএসএস প্রায় ১২ টির অধিক ব্যুরোতে বিভক্ত।  

৫.FSB, Russia (Former KGB): এটি ১৯৯৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়।এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০০০০ থেকে ৩০০০০০ জন এর মত। রাশিয়ার মস্কোর লুবিয়াংকা স্কয়ারে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।আলেক্সান্ডার বর্টিকভ হচ্ছেন এর ডিরেক্টর যাকে প্রেসিডেন্ট ডিমিট্রি মেদভেদ নিয়োগ দিয়েছিলেন। ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফ রাশিয়ান ফেডারেশন রাশিয়ার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এবং পূর্ববর্তি কেজিবি (সোভিয়েত) এর বর্তমান রুপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পর কেজিবির নতুম নাম হয় এফএসবি । এফএসবি নিয়োজীত আছে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এবং সীমান্ত সুরক্ষা, কাউন্টার টেরোরিজম এবং নজরদারির কাজে। জরুরী প্রয়োজনে রাশিয়ার সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে এফএসবি দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। এফ এস বি রাশিয়ার অভ্যন্তরিন নিরাপত্তা, বিদেশি স্পাইদের রাশিয়ায় গোপন কার্যক্রম প্রতিরধ, মাদক চোরাচালান, অস্ত্রের চোরাচালান রোধ করতে কাজ করে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এফ এস বির সব দুর্র্ধষ স্পাই যারা নিয়মিত এফ এস বিকে গোপন তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে এফএসবির সর্বমোট কর্মকর্তার সংখ্যা এবং এদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটের পরিমাণ এদের নিজস্ব কৌশল হিসেবে গোপন রাখা হয়।

৬.RAW, India (Research and Analysis Wing): আলোচিত এই গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাসাল ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ সাল। নয়াদিল্লী হচ্ছে এর কেন্দ্রস্থান আর আলোক জোশি হচ্ছেন এজেন্সি নির্বাহী।  র এর প্রধান এজেন্সি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 
র ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা। ভারতকে প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে ২ টি বড় যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছে,  চীন-ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ সালে অপরটি ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ।  থেকেই ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার ও আইবি র ডেপুটি ডাইরেক্টর আর.এন.কাও র নেতৃত্বে ভারতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে RAW, India (Research and Analysis Wing)। এর প্রধান কাজ হল বিদেশি গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার টেরোরিজম এবং গোপন অপারেশন চালানো। পার্শবর্তী দেশসমুহ যাদের সাথে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ঐ সব দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারনে ভুমিকা রাখাও র এর অন্যতম কাজ।  র বিদেশি সরকার, ব্যাবসায়ী, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষন করে থাকে এবং সে অনুযায়ী ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এশিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশে র এর এজেন্ট রয়েছে। 
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ৯ জানুয়ারী ২০১৪

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন