ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে আইপিও চাঁদা সংগ্রহের পরিকল্পনা

ব্যাংকের সামনে আর দীর্ঘ লাইন ধরতে হবে না শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে আইপিও চাঁদা সংগ্রহের পদ্ধতি প্রচলনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। 
সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সংস্থার পাবলিক ইস্যু রুলস বিধিমালা সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটি গেল জানুয়ারিতে একই সুপারিশ করেছিল।
বিএসইসি সূত্র জানায়, আজ সোমবার এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যালয়ে কমিশনের সঙ্গে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন ও চাঁদা গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ করার উপায় খুঁজতে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলে বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ ব্রোকারেজ হাউসে আইপিও আবেদন ও টাকা জমা দেবেন। আর নিজ বিও হিসাবে টাকা থাকলে কেবল আবেদন জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের আবেদন পাওয়ার পর তার হিসাব থেকে আইপিও চাঁদার সমপরিমাণ টাকা ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করবে।
 
আবেদনকারী আইপিও পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হলে ওই টাকা কোম্পানির হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। যারা আইপিওতে শেয়ার পাবেন না তাদের টাকা পুনরায় বিও হিসেবে ফেরত দেওয়া হবে।নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি ভালো।
 
কারণ এ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এতে তাদের দুর্ভোগ কমবে। রিফান্ড পাওয়ার জন্যও কাউকে ছোটাছুটি করতে হবে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিইও সাজিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেই এ প্রস্তাবটি স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। আমরা চাই বিনিয়োগকারীবান্ধব শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সহজ পরিবেশ সৃষ্টি করতে এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা উচিত।
আইপিও বিষয়ে আরও প্রস্তাব :ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে কমিশন আইপিও অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট ওই কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার উপযুক্ত কি-না সে বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামত গ্রহণের প্রস্তাব করা হবে। একই সঙ্গে আইপিওতে শেয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা চালুরও প্রস্তাব করা হবে। বৈঠকে ডিএসই শুধু ব্যাংক লোন শোধে আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার দাবি জানাবে।
অন্যদিকে সিএসই সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রসপেক্টাসে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটরকে জরিমানা করার বিধান পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ২০০৬-এ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছে সিএসই। এ ধরনের অপরাধের জন্য ইস্যু ম্যানেজারের লাইসেন্স বাতিল বা অন্তত এক বছরের জন্য স্থগিত করারও প্রস্তাব করা হবে।
 
একই সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রকল্পভিত্তিক কোম্পানির জন্য অনগোয়িং (চলমান) কোম্পানির মতো আইপিও অনুমোদন না দিয়ে প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হবে।
আজকের বৈঠক বিষয়ে সিএসইর সিইও বলেন, আইপিও বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছি। সেই প্রস্তাব গ্রহণের জন্য এসইসিকে অনুরোধ জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, দেখা যাচ্ছে এখান বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদে লাইসেন্স পেয়ে আইপিওতে আসছে।
 
মেয়াদ শেষে কোম্পানিটি আরও সময় চলবে কি-না তার নিশ্চয়তা নেই। এ ধরনের কোম্পানিকে অন্যান্য অনগোয়িং কোম্পানির মতো আইপিও অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ফাইন্যান্সের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৫ বছর আগে থেকে এসব কোম্পানি প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ফেরত নিয়ে মূলধন ফেরত দেওয়া শুরু করবে। মেয়াদ শেষের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি মূলধন ফেরত দেবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইপিও অনুমোদন ও তালিকাভুক্তির সম্পূর্ণ এখতিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জকেই দেওয়া যায় কি-না সে বিষয়টিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এর আগে পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধন বিষয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের অনেকগুলো প্রস্তাব বিবেচনা করেছে কমিশন।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২ ডিসেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন