ব্যাংকিং খাতে স্থবিরতা
ব্যাংক ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। দিনের পর দিন গচ্ছা আর
লোকসান গুনতে গুনতে অতিষ্ঠ এ খাতের ব্যবসায়ীরা। সব দিকে এক ধরনের
স্থবিরতা। বড় বিনিয়োগ বিয়োগের পর এবার ছোট বিনিয়োগও বিদায়ের পথে। যদিও ছোট
বিনিয়োগ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু
অনিশ্চিত গন্তব্যে ছুটছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। ইতিমধ্যে কমপক্ষে ছোট
বিনিয়োগ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে।
তহবিল ছাড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ না হলেও গণমাধ্যমে ব্যাপক
প্রচারের প্রত্যাশা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি কৃষিভিত্তিক শিল্প
খাতে ২০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের
জন্য ৮০০ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণে
১০০ কোটি টাকা, পাট ব্যবসায়ীদের জন্য ১০০ কোটি টাকা এবং ঢাকা চেম্বারের দুই
হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ১০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করা
হয়েছে। এরপর সর্বশেষ ১০ টাকার হিসাবধারীদের জন্য আরও ২০০ কোটি টাকার
পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৪০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। এদিকে গত এক
বছরে ব্যাংকিং খাতে স্থায়ী আমানত বেড়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আর
বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণে ধস নেমেছে, যা ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে
কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। তাই
দীর্ঘমেয়াদি আমানতে সুদ হার কমাচ্ছে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর
পক্ষ থেকে কোন প্রজ্ঞাপন জারি না করে মৌখিকভাবে গ্রাহকদের এ তথ্য জানিয়ে
দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত
ব্যাংকিং খাতে স্থায়ী আমানত দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬১ কোটি ৮১ হাজার
টাকা, যা গত বছরের জুন শেষেও ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ২৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে স্থায়ী আমানত বেড়েছে প্রায়
৫৮ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জুলাই শেষে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আমানত
বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। অথচ ঋণ বেড়েছে ৮ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে সামগ্রিকভাবে ৫ লাখ ৮১
হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা রয়েছে
নগদ। সে হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোট অর্থের ৩০.৮৮ শতাংশই তারল্য। এতে
ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে ৭৯ হাজার ৬৬৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়
দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের
পরিমাণ নেমেছে ১১.০৭ শতাংশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮.১১ কম, যা পৌনে
পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি
খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ শতাংশের ঘরে। বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকার কারণে
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। ফলে বছর শেষে লোকসান থেকে
বাঁচতে ওই সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে স্থায়ী আমানতে সুদ হার কমানোর
নোটিস করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাবেক গভর্নর ড. সালেহ
উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা
ব্যাংকবিমুখ হচ্ছেন। পাশাপাশি অবকাঠামোগত সমস্যা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের
কারণে ব্যাংকে ছোট বিনিয়োগও যদি হাতছাড়া হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে হয়তো
ব্যাংকগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২৮ নভেম্বর ২০১৩
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন