চার মাসে টিআইএন নিয়েছেন ৪২ শতাংশ করদাতা

১৭ লাখ করদাতা নিবন্ধনের হিসাব কষা হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত মাত্র সাত লাখ ২৫ হাজার করদাতা অনলাইনে টিআইএন সংগ্রহ করেছেন। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪২ শতাংশ মাত্র। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
এনবিআর সূত্র জানায়, বেঁধে দেওয়া ৩১ ডিসেম্বরের পর যেসব ব্যক্তি রাজস্ব পরিশোধে সক্ষম কিন্তু টিআইএন সংগ্রহ করেননি, তাঁদের নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে খুঁজে বের করা হবে। কর ফাঁকিবাজদের বাধ্যতামূলক টিআইএন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে শাস্তিমুলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে তাঁদের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে অনলাইনে টিআইএন প্রদানে রেজিস্ট্রেশন এবং রি-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করে এনবিআর। অনলাইনে আগের ১০ ডিজিটের টিআইএন বাতিল করে সম্পূর্ণ নতুনভাবে ১২ ডিজিটের নম্বর দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। করদাতাদের আগের টিআইএন ৩১ ডিসেম্বরের পর বাতিল বলে গণ্য হবে। ১ জানুয়ারি থেকে ১২ ডিজিটের টিআইএনের মাধ্যমে করদাতাকে শনাক্ত করা হবে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিআইএনও প্রদর্শন করতে হবে। নতুন টিআইএন গ্রহণের মাধ্যমে করদাতাদের তথ্য এনবিআরের তথ্যভাণ্ডারে সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাতে প্রয়োজনে যেকোনো সময় করদাতার আয়-ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য রাজস্ব কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখতে পারেন।
এনবিআর কর্মকর্তা খুরশিদ কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আজ (গতকাল সোমবার) পর্যন্ত ছয় লাখ সাত লাখ ২৫ হাজার করদাতা অনলাইনে টিআইএন সংগ্রহ করেছেন।'
এনবিআর থেকে ১৭ লাখ করদাতা অনলাইনে টিআইএন সংগ্রহ করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৩৪ দিনে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার ৪১০ জন করদাতা টিআইএন সংগ্রহ করেছেন। এ হিসাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৫০ দিনে আরো দুই লাখ ৭০ হাজার ৫০০ জন করদাতার টিআইএন গ্রহণ করতে পারেন। অর্থাৎ এ হিসাবে ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ জন হবে টিআইএনধারীর সংখ্যা। শেষ মুহূর্তে টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়লেও ৫০ দিনে অতিরিক্ত আরো সাত লাখ ৪৫ হাজার করদাতা টিআইএন নেবে- এমন আশা করা উচিত হবে না বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনবিআরের চুক্তি হয়েছে, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারবে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডার থেকে আয়-ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখে রাজস্ব পরিশোধে সক্ষম করদাতাদের খুঁজে বের করা হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, টিআইএনধারীর সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলে এনবিআর কঠোর অবস্থানে যাবে। যেসব করদাতা রাজস্ব পরিশোধে সক্ষম অথচ টিআইএন সংগ্রহ করেননি তাঁদের বাধ্যতামূলক টিআইএন দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও ১ জানুয়ারি থেকে করদাতা খুঁজে বের করার কাজ শুরু করবে রাজস্ব বোর্ড। এ ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক টিআইএন প্রদান এবং জরিমানা করা হবে। নতুন পদ্ধতিতে ভুয়া টিআইএন সংগ্রহ করতে পারবে না কেউ। অটোমেশনের মাধ্যমে এনবিআর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুয়া টিআইএন বাতিলের কাজ চলছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের ১০ ডিজিটের টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩২-৩৩ লাখ হলেও প্রকৃতপক্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ১২ থেকে ১৪ লাখ করদাতা। অতীতে অনেকেই ভুয়া টিআইএন নিয়েছেন। আবার অনেকে টিআইএন থাকলেও রিটার্ন পরিশোধ করেন না। নতুন পদ্ধতিতে অনলাইনে টিআইএনধারীর সব তথ্য এনবিআরের তথ্যভাণ্ডারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ হচ্ছে। টিআইএন গ্রহণ করেও রিটার্ন পরিশোধ না করলে করদাতাকে সহজে চিহ্নিত করে বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে। এভাবে চলতে থাকলে সব করদাতাই নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। ভবিষ্যতে টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়বে; নিয়মিত রিটার্নও আদায় হবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এক কোটির বেশি টিআইএনধারীর সংখ্যা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র: দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ১২ নভেম্বর ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন