বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট বন্ধের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট বন্ধের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীরবিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট 'ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি)' গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় দেওয়া অর্থমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন, এই ইউনিটের জেহাদি মনোভাব ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এটি বন্ধ হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। অর্থমন্ত্রীর বিবৃতিটি আইএমএফ তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
পদ্মা সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উত্থাপনকারী বিশ্বব্যাংকের আইএনটি বন্ধ হওয়া উচিত বলে অর্থমন্ত্রী এর আগে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন। তবে এই প্রথম তিনি বিশ্বব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেন। অর্থমন্ত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএনটি গুটিয়ে ফেলে দুর্নীতি ধরা অথবা প্রতিরোধের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অর্থমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ও কর্মসূচি মূল্যায়ন এবং তদারকিতে অনেক বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এসব কাজে 'স্বাধীন মূল্যায়ন অফিস, পরিদর্শনকারী প্যানেল, ন্যায়পাল, এনটিটি অব এথিকস অ্যান্ড বিজনেস এবং আইএনটি যুক্ত। কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে এত প্রতিষ্ঠানের দরকার আছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রকল্পের প্রক্রিয়াগত সময় কমিয়ে আনা, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি অফিসের ক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও কিছু প্রস্তাব করেন।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পে তদারকি পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত আইএনটি রেফারেল রিপোর্ট দেয় গত বছরের ৪ এপ্রিল। রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, এ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ পেতে আগ্রহী কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র করেছে। বিশ্বব্যাংক জানায়, এ বিষয়ে কানাডায় তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে এবং কানাডা পুলিশ এসএনসি-লাভালিনের দু'জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ডায়েরিতে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে কমিশন দেওয়া হবে_ মর্মে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য দুদকে বিশেষ টিম গঠন করা এবং তদন্ত মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংক নিয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে সহায়তার শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। অভিযুক্তদের ছুটিতে পাঠানো ও দুদকে বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের শর্তে সরকার সাড়া না দেওয়ায় গত বছরের ২৯ জুন এ প্রকল্পে ঋণ বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। পরবর্তী সময়ে শর্ত মানলে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংক ঋণ পুনর্বহালের আশ্বাস দেয়। শেষ পর্যন্ত সরকার নিজেই বিশ্বব্যাংককে 'না' বলে দেয়।
আইএনটির গত বছরের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, আইএনটির তদন্তের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের তহবিলের অপব্যবহার রোধ হয়েছে। কোনো রকম অর্থ ছাড়ের আগে আইএনটির তদন্তে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারদের মধ্যে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, আইএনটি ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের সরকারকে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ সংবলিত রেফারেল রিপোর্ট দেয়। এর ভিত্তিতে দুর্নীতি ও প্রতারণার জন্য বিভিন্ন দেশের ৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যাংকের কাজে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, আলোচ্য অর্থবছরে আইএনটির কাছে সারাবিশ্ব থেকে দুর্নীতি, প্রতারণা, আঁতাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে ৫১২টি অভিযোগকে আমলে নিয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে ৮১টি অভিযোগকে 'কেস' হিসেবে নেয় বিশ্বব্যাংক। নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে ২৫টি দেশের সরকারকে রেফারেল রিপোর্ট দেওয়া হয়, যাতে ওই দেশগুলো তাদের আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। এসব দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বেলজিয়াম, গাম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চীন, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, উগান্ডা, সুদান, মালদোভা, মেক্সিকো, বেলিজ, হন্ডুরাস, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, পশ্চিম তীর ও গাজা, জাম্বিয়া, লেসেথে ও ইরাক।
সূত্র: দৈনিক সমকাল

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন