আমানত বীমা আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠছে

তফসিলি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এবার ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমানত বীমা আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ জন্য 'আমানত বীমা আইন-২০০০' সংশোধন করছে সরকার। এরই মধ্যে আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর 'বীমাকৃত আমানতের বিপরীতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবিত আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। শিগগিরই মন্ত্রিসভায় এর খসড়া অনুমোদনের জন্য উঠবে। বর্তমানে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৫৯টি এবং অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১টি।
সূত্র জানায়, আমানত বীমা আইনের খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দু'বার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের ওপর আমানত সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। পর পর দু'বার বা তার বেশি প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'অবসায়ন' করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শও দিতে পারবে।
আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। আইনের সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে, 'কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার কাছে রক্ষিত হিসাব থেকে সমপরিমাণ অর্থ ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম বাবদ কেটে তা তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে বিলম্বিত সময়ের জন্য নির্ধারিত প্রিমিয়ামের ওপর ব্যাংক রেট অনুযায়ী দণ্ডসুদ আরোপ করতে পারবে।'
খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, 'কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরপর দু'বার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শুনানির সুযোগ দিয়ে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উল্লেখিত সময়ের জন্য আমানত গ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে পারবে।'
সংশোধনীতে বলা হয়েছে, 'কোনো বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের আদেশ দেওয়া হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তার বীমাকৃত আমানতের সমপরিমাণ টাকা, যা সর্বাধিক এক লাখ টাকা অথবা সরকারের পূর্বানুমোদক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত টাকার বেশি হইবে না, তহবিল থেকে পরিশোধ করিবে।
'অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে এবং ওই সব হিসাবে একসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলেও তাকে তহবিল থেকে সর্বাধিক এক লাখ টাকা কিংবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত টাকার অধিক পরিশোধ করা হইবে না। তবে এই ধরনের পরিশোধ অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে লিকুইডেটর কর্তৃক আমানতকারীদের পরিশোধিত অঙ্কের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
সংশোধনীতে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ক, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, তার কার্যভার গ্রহণের পর অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ছকে আমানতকারীর আমানতের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাখিল করতে হবে। তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ পরিশোধিতব্য টাকা থেকে কম হলে সরকার ঘাটতি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক রেটে কর্জ করে তহবিলে জমা দেবে।
এতে বলা হয়েছে আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, আমনতকারীর আমানতের পরিমাণ নির্ধারণের সময় বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগতভাবে আমানতকারীর কাছে কোনো পাওনা থাকিলে তা বাদ দিয়ে পাওনা নির্ধারণ করবে। এই আইনে বা তদধীন কোনো বিধি বা প্রবিধানের অধীনে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজ বা দায়ের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো মামলা, ফৌজদারি কার্যক্রম বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা রুজু করা যাবে না।
(সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২১ অক্টোবর, ২০১৩)

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন