মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ বেড়েছে ২০.৫৫ শতাংশ

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চাহিদা কমে যাওয়ার পরও গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদি শিল্পঋণ হিসেবে মোট ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার ২৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সর্বোচ্চ ১২ হাজার ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নয় হাজার ৭২০ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শিল্পঋণ বিতরণ কমে হয় ১০ হাজার ৬১ কোটি টাকা। আর শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ হাজার ৫১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ বেড়ে যাওয়ার এই চিত্র খুব বড় কিছু বলে মনে হয় না। কেননা, চলতি মূলধনে অর্থায়ন ও আমদানি পরিস্থিতির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বিশেষত, গত অর্থবছর আমদানি কমে গেছে।’
শিল্পঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জায়েদ বখত বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে প্রচুর বাড়তি তারল্য বা নগদ অর্থ জমে গেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। কাজেই তাদের দিক থেকে একটা চেষ্টা আছে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর। ইতিমধ্যে সুদের হার বেশ কমেছে। ঋণের সুদ কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতিই ঋণ নিয়েছেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় অনেক শিল্পকারখানা কাজ শুরু করতে পেরেছে। তাদেরও ঋণ প্রয়োজন। আবার ব্যবসা সম্প্রসারণে না গেলেও নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋণ নিতে হয়েছে অনেককে।’
বিআইডিএসের এই অর্থনীতিবিদের মতে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবাহ অনেক কমে গিয়েছিল। সোনালী ব্যাংক কার্যত মেয়াদি ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশৃঙ্খল অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পর তিন-চার মাস ধরে ঋণপ্রবাহ বাড়ছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার আগস্ট মাসে গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) যে পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়ায় শিল্প খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
চেম্বারের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি, শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ।
শিল্পঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে ৩০ হাজার ২৩৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বকেয়া শিল্পঋণ আদায় করা হয়েছিল, সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আদায় করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৪৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসেবে শিল্পঋণ আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন