স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অর্থায়নে সব নিয়ম শিথিল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত
ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপকে সচল করতে সব
ধরনের ঋণনীতিমালা শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি
ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সব ধরনের সুবিধা নিতে পারবে। গতকাল
কেন্দ্রীয় ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ও অর্থায়নকারী ৫ ব্যাংকের মধ্যে
ত্রিপক্ষীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রুপটিকে অর্থায়নের
জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ পাবে। কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রুপের কারখানা আবারও সচল হয়ে উঠবে বলে
জানান স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ক্রেতা ও শ্রমিকরা আমাদের ওপর এখনও আস্থাশীল। অর্থায়ন সমস্যার
সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কারখানা আবারও পুরোদমে
চালু করা যাবে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের
সভাপতিত্বে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের মালিকপক্ষের
একটি প্রতিনিধিদল এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপকে ঋণ প্রদানকারী ৫টি বাণিজ্যিক
ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর
পর্যন্ত গ্রুপটির ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩১ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন
ডলার। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানেরই বকেয়া ঋণ ২৭ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন
ডলার। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) নীতিমালার আওতায়
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ
সহায়তা পাবে। এ ক্ষেত্রে ৬ মাস মেয়াদি লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট+ ১.৫%
সুদ হার প্রযোজ্য হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যা ২.৫ শতাংশ। এ ছাড়া গ্রুপটিকে
বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদে ৩টি বিদেশী ব্যাংক আরও ২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ
সুবিধা প্রদান করবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থানীয় মুদ্রায় বিদ্যমান
দায়-দেনা অর্থায়নকারী ব্যাংকের সম্মতি সাপেক্ষে ডাউন পেমেন্ট ব্যতিরেকে এক
বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ পাঁচ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন করা হবে।
পুনঃতফসিলকৃত/পুনর্গঠিত ঋণের সুদহার ব্যাংকের তহবিল ব্যয়ের চেয়ে বেশি হবে
না। বিদ্যমান বকেয়া ঋণ মেয়াদপূর্তিতে ৬ মাস করে ৩ বছর পর্যন্ত শুধু আসল
নবায়ন করা যায়। অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলো একই নিয়ম অনুসরণ করবে। এ সুবিধা
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অধীন ইডিএফ সুবিধা গ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠানের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কোন কোন প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা
গ্রহণ করতে আগ্রহী তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে
নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থায় রপ্তানিকারক
প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্থাপিত রপ্তানিকারকের রিটেনশন হিসাব (ইআরকিউ) স্থিতি
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই তার প্রয়োজনীয় বৈদেশিক ব্যয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
অনুমোদন ছাড়াই ব্যয় করতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপভুক্ত অন্য
প্রতিষ্ঠানগুলোর ইআরকিউ হিসাবের স্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষ
ব্যবহার করতে পারবে। প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্য থেকে আমদানি দায়
নির্বাহের জন্য ওই রপ্তানিমূল্য মার্জিন হিসেবে সর্বোচ্চ এক মাস সংরক্ষণ
করা যায়। এ হিসাবে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকের
আমদানি দায় নির্বাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপভুক্ত এক
প্রতিষ্ঠানের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষ অন্য প্রতিষ্ঠান
ব্যয় করতে পারবে। কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য স্থাপিতব্য
ঋণপত্রের ক্ষেত্রে কেইস টু কেইস ভিত্তিতে সময় ঋণপত্রের সময় স্ট্যান্ডার্ড
গ্রুপের চাহিদার গ্রাহকের সময় দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক শেষে ডেপুটি
গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অগ্নিকাণ্ড একটি জাতীয়
বিপর্যয়। গ্রুপটির কারখান সচল করতে বিভিন্ন নিয়মে তাদের ছাড় দেয়ার
সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা শুধু তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। বিদেশী ব্যাংকগুলো
দেশীয় মুদ্রায় ঋণ বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষ দীর্ঘমেয়াদের জন্য
বিদেশী ঋণে রূপান্তর করে নেবে। এতে গ্রুপটি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান
আতিকুর রহমান ও এমডি মোশাররফ হোসেন, প্রাইম ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু,
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি ফরমান আর চৌধুরীসহ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড,
সিটি ব্যাংক এনএ ও এইচএসবিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, নির্বাহী
পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও এস এম মুনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩
0 comments
আপনার মন্তব্য লিখুন