সরবরাহ কম: আমদানি পণ্যের দাম বাড়ছে

হরতালের কারণে আমদানি পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে চড়া দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। সরবরাহ সংকটের কারণে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
খুচরা বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে পেঁয়াজ, আদা, ডালসহ আমদানি পণ্যের দাম। আমদানি জটিলতার কারণে টিসিবির খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। রাজধানীতে নৌপথে কিছু পণ্য সরবরাহ হলেও তা পরিমাণে খুবই কম। পক্ষান্তরে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিক্রিও অর্ধেকের বেশি কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা।

টিসিবি সূত্রে জানা যায়, দু'দফায় পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মেলেনি। এ কারণে বাজারে টিসিবির পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে না। হরতালের কারণে আমদানিকারকরা যথাসময়ে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারবেন না। এ জন্য দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন না তারা। তবে টিসিবির পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মিরপুর, মগবাজার, নিউমার্কেট, কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে হরতালের কারণে হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতারাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গতকাল আবারও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম।

গত রোববার ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫ টাকা ছিল। এখন যথাক্রমে ১১০ টাকা ও ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি। ঈদ উপলক্ষে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত টিসিবির পেঁয়াজ খোলাবাজারে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতারা জানান, টিসিবির পেঁয়াজ সরবরাহ  থাকায় ঈদে বাজারে পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ছিল। এখন টিসিবির পেঁয়াজ না থাকায় বাজারে দাম অস্থিতিশীল রয়েছে। এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, আদার দামও দেড়শ' টাকা ছাড়িয়েছে।

দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও চীনা আদা ১৫০-১৬০ টাকা। খুচরা বাজারে বেশি বেড়েছে আমদানি করা ডালের দাম। দেশি মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হলেও কানাডা মসুর ডাল ৮০ থেকে বেড়ে ৯০ টাকা এবং অ্যাঙ্কর ৪৫ থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, হরতালের আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য সরবরাহ কমেছে।

এখন হরতালের কারণে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে আমদানি পণ্যের দামে বেশি প্রভাব পড়েছে। শান্তিনগর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও হাতিরপুল বাজারের জসিম উদ্দিন বলেন, দু'দিনে হরতালের কারণে অর্ধেকের বেশি বিক্রি কমেছে।

রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দাম। এ ছাড়া ঈদ-পরবর্তী সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা কম রয়েছে। এর পরও হরতালে বাজারে ক্রেতা আসছেন না। এতে বেচাকেনায় চরম মন্দা চলছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, হরতালে দু'দিনে নতুন কোনো সবজি আসেনি। এখন বেশির ভাগ সবজি বিক্রি শেষ পর্যায়ে। এভাবে টানা হরতাল থাকলে একদিকে কৃষককে লোকসান দিতে হবে, অন্যদিকে ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হবে।
সবজির সরবরাহ সংকটে চড়া দাম। এখন বেশির ভাগ সবজি ৬০ টাকা কেজি। টমেটো ১০০, শসা ৪০ ও পেঁপে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচামরিচ ১১০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। হরতালের কারণে মাছের দামও কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।

গতকাল প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০ টাকা, কাতল ৩৭৫, আইড়-কোরাল ৬৫০, তেলাপিয়া ১৮০ ও পাঙ্গাশ ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১২০ টাকা ও ডিমের ডজন ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

,

0 comments

আপনার মন্তব্য লিখুন